টাকা ধারের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম ২০২৪ – হাওলাত টাকা দেওয়ার অঙ্গিকারনামা
টাকা ধারের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম ২০২৪ (Rules for Writing Money Lending Agreements 2024) – হাওলাত টাকা দেওয়ার অঙ্গিকারনামা! টাকা ধারের চুক্তিপত্র লেখার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি উভয় পক্ষের জন্য আইনি সুরক্ষা প্রদান করে, কারণ লিখিত চুক্তি প্রমাণ হিসেবে কাজ করে এবং বিতর্ক বা সমস্যা দেখা দিলে আইনি প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা যায়। দ্বিতীয়ত, চুক্তিপত্রে টাকার পরিমাণ, ফেরত দেওয়ার সময়সীমা, সুদের হার ইত্যাদি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকায় পরবর্তীতে কোনো বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে না। তৃতীয়ত, লিখিত চুক্তি উভয় পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি করে, যা পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষায় সহায়ক। এছাড়া, চুক্তিপত্র আর্থিক ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে এবং ধারগ্রহণকারীকে তার দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করে। চতুর্থত, ধারগ্রহণকারী চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলতে ব্যর্থ হলে, ধারদাতা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন এবং চুক্তিপত্র প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন। অবশেষে, চুক্তিপত্র ধারগ্রহণকারীকে তার আর্থিক পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে এবং ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ মঞ্জুর করার আগে চুক্তিপত্র দেখতে চাইতে পারে। সুতরাং, টাকা ধারের চুক্তিপত্র উভয় পক্ষের জন্য নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা এবং নিশ্চিততা প্রদান করে এবং একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত আর্থিক লেনদেন নিশ্চিত করে।
টাকা ধারের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম
আমরা যখন পরিচিত কারো কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করি তখন অনেক সময় সাদা কাগজে কিছু একটা লিখে স্বাক্ষর করিয়ে থাকি বা চাইলে ষ্ট্যাম্পের উপরে লিখে প্রিন্ট করে স্বাক্ষর করিয়ে রাখি। তবে আজকে আমরা জানবো টাকা ধারের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম বা কিভাবে হাওলাত নেওয়ার টাকার অঙ্গিকারনামা লিখতে হয়। হাওলাত টাকার লেনদেন করার জন্য ষ্ট্যাম্প বা কাগজে কি কি লিখা লাগে, কি কি বিষয় গুলো তুলে ধরতে হয়। তবে এই লেখা গুলো যদি আইনি ভাবে পরবর্তীতে সহায়তা পেতে চান তাহলে ১০০ টাকার তিনটি ষ্ট্যাম্প পেপারে প্রিন্ট দিতে হবে কারন বাংলাদেশ আইনে ৩০০ টাকার নিচের ষ্ট্যাম্প পেপারে প্রিন্ট করলে সেটার আইনি মূল্যায়ন থাকে না।
হাওলাত টাকা দেওয়ার অঙ্গিকারনামা
টাকা ধারের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম হিসেবে এবং হাওলাত টাকা দেওয়ার অঙ্গিকারনামা নিম্নে একটি ফরমেট তুলে ধরা হবে। যেখানে প্রথমেই অঙ্গীকারনামা লিখা থাকবে বড় করে। তারপর প্রথমপক্ষ যিনি টাকা দিবেন এবং দ্বিতীয়পক্ষ যিনি টাকা নিবেন তিনিদের নাম ঠিকানা উল্লেখ করতে হয়। এরপরের অংশে কত টাকা নিলেন দ্বিতীয়পক্ষ এবং কত তারিখে টাকাটি ফিরিয়ে দেবেন তা উল্লেখ করতে হয়। এর মধ্যে যদি কোন ধরনের শর্ত রাখতে চান কেউ তাহলে যেকোন শর্তাবলী দিয়ে দিতে পারেন। এরপর একদম শেষে যিনি টাকা নিবেন তার স্বাক্ষর থাকবে এবং স্বাক্ষীগণের স্বাক্ষর দিতে হবে।
নিচে অঙ্গীকারনামা নমুনা ফরমেট তুলে ধরা হলোঃ-
অঙ্গীকারনামা
মোঃ ফখরুল আলম, পিতা- খুরশেদ আলম, মাতাঃ মোছাঃ রানুয়ারা বেগম, জাতীয় পরিচয়পত্র নং ৬৯৮৩৬৯৭৮৬১, মোবাইল নং-০১৭৩২৪৯১, বর্তমান ঠিকানাঃ বাসা-১৯, রোড-৩, বনানী, ঢাকা, স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-ভাগলপুর, পোঃ ভাগলপুর, থানাঃ বাজিদপুর, জেলাঃ কিশোরগঞ্জ, জাতীয়তা-বাংলাদেশী, ধর্ম-ইসলাম, পেশা-চাকুরী।
—–প্রথম পক্ষ (দাতা)।
মোঃ ………………….., পিতাঃ………………………………, মাতা-…………………………., জাতীয় পরিচয়পত্র নং …………….., মোবাইল নং-…………………., বর্তমান ঠিকানাঃ …………………। স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম/মহল্লাঃ …………………, ডাকঘর: …………………, উপজেলাঃ …………………., জেলাঃ ………………….., জাতীয়তা-বাংলাদেশী, ধর্ম-ইসলাম, পেশা-চাকুরী।
—–দ্বিতীয় পক্ষ (গ্রহীতা)।
চলমান পাতা-০২
পাতা নং-০২
প্রথম পক্ষ কর্তৃক আমি দ্বিতীয় পক্ষের টাকা প্রয়োজন হওয়ায় ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা হাওলাত হিসেবে গ্রহণ করিলাম।
উক্ত টাকা আমি দ্বিতীয়পক্ষ ২৩/১০/২০১৯ইং তারিখ রোজ বুধবার হইতে আগামী এক মাসের মধ্যে ২২/১১/২০১৯ইং তারিখ রোজ শুক্রবার এর মধ্যে পরিশোধের করিব। উক্ত তারিখে টাকা পরিশোধ করা না হইলে আমার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইলে আমি দ্বিতীয়পক্ষের কোন আপত্তি থাকিবে না।
চলমান পাতা-০৩
পাতা নং-০৩
এই বিবৃতি আমি দ্বিতীয়পক্ষ স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে এবং বিনা প্ররোচনায় উপস্থিত স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে নিম্নে আমার সহি সম্পাদন করিলাম।
স্বাক্ষীগণের নাম ও স্বাক্ষর
১। দ্বিতীয় পক্ষের স্বাক্ষর
২। মোঃ …………………….
৩।
অঙ্গীকারনামা প্রিন্ট করার নিয়ম
মাইক্রোসফটে লেখার পর এটিকে পেইজ সেটাপ করে নিতে হবে। ফাইল ওপেন থাকা অবস্থায় বাম পাশে একদম সাইটে ডাবল ক্লিক করে পেইজ সেটাপ অপশনে যেতে হবে। তারপর পেপার অপশন থেকে লিগ্যাল সাইজ করে দিতে হবে। তারপর margins অপশন থেকে উপরে মানে টপে 4.5 ইঞ্চি রাখতে পারেন, লেফট ও রাইট এ 1ইঞ্চি রাখতে পারেন। তারপর নিচে মানে বোটমে 1.5 ইঞ্চি রাখতে হবে। তারপর পেইজ সেটাপটি ওকে করে দিতে হবে।
এখন ৩টি ষ্ট্যাম্প পেপারে লেখাগুলো ভাগ করে প্রিন্ট করে নিতে হবে।
হাওলাত টাকা দেওয়ার অঙ্গিকারনামা, টাকা ধারের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম
টাকা ধারের চুক্তিপত্র (Loan Agreement) লেখার নিয়মে সাধারণত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নিচে বাংলায় একটি সাধারণ টাকা ধারের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম দেওয়া হলো:
১. শিরোনাম
– চুক্তিপত্রের শিরোনামে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে এটি একটি “টাকা ধারের চুক্তিপত্র”।
২. পত্রের ভূমিকা
– চুক্তিপত্রের প্রথম অংশে পক্ষগুলোর পরিচয় উল্লেখ করতে হবে। যেমন:
“`
এই চুক্তিপত্রটি [তারিখ] তারিখে, [ধারদাতা/প্রতিষ্ঠানের নাম], [ঠিকানা] এবং [ধারগ্রহণকারী/প্রতিষ্ঠানের নাম], [ঠিকানা] এর মধ্যে সম্পাদিত হল।
“`
৩. ধারদানের শর্তাবলী
– ধার দেওয়া টাকার পরিমাণ:
“`
ধারদাতা এই মর্মে সম্মতি দিচ্ছেন যে, তিনি ধারগ্রহণকারীকে [টাকার পরিমাণ] টাকা ধার দেবেন।
“`
– সুদের হার (যদি প্রযোজ্য হয়):
“`
ধার দেওয়া টাকার উপর ধারগ্রহণকারী প্রতি মাসে [সুদের হার]% হারে সুদ প্রদান করবেন।
“`
– টাকা ফেরত দেওয়ার সময়সীমা:
“`
ধারগ্রহণকারী ধারদাতা থেকে প্রাপ্ত টাকাটি [নির্দিষ্ট সময়/তারিখ] এর মধ্যে ফেরত প্রদান করবেন।
“`
৪. ফেরত দেওয়ার পদ্ধতি
– টাকা ফেরত দেওয়ার পদ্ধতি ও কিস্তির পরিমাণ (যদি প্রযোজ্য হয়):
“`
ধারগ্রহণকারী ধারদাতাকে প্রতি মাসে [কিস্তির পরিমাণ] টাকা করে [মাসের সংখ্যা] মাসে ফেরত প্রদান করবেন।
“`
৫. অন্যান্য শর্তাবলী
– চুক্তির লঙ্ঘন:
“`
যদি ধারগ্রহণকারী নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হন, তবে ধারদাতা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
“`
– বিতর্কের নিষ্পত্তি:
“`
এই চুক্তি সম্পর্কিত যেকোনো বিতর্ক স্থানীয় আদালতে নিষ্পত্তি করা হবে।
“`
৬. সাক্ষর
– পক্ষদের স্বাক্ষর:
“`
ধারদাতা:
স্বাক্ষর: ___________________
নাম: ______________________
তারিখ: ____________________
ধারগ্রহণকারী:
স্বাক্ষর: ___________________
নাম: ______________________
তারিখ: ____________________
“`
৭. সাক্ষী
– সাক্ষীদের নাম ও স্বাক্ষর (যদি প্রয়োজন হয়):
“`
সাক্ষী ১:
নাম: ___________________
স্বাক্ষর: ________________
সাক্ষী ২:
নাম: ___________________
স্বাক্ষর: ________________
“`
উপরোক্ত নির্দেশিকা অনুসরণ করে একটি সম্পূর্ণ ও বৈধ টাকা ধারের চুক্তিপত্র তৈরি করা যেতে পারে। চুক্তিপত্র তৈরি করার আগে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া ভালো।