স্বাস্থ্য

টাইফয়েড জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা, প্রতিকার, পরবর্তী সমস্যা ও ক্ষতিকর দিক ২০২৪

টাইফয়েড জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা, প্রতিকার, পরবর্তী সমস্যা ও ক্ষতিকর দিক ২০২৪ (Typhoid fever causes, symptoms, treatment, remedies, and side effects 2024)! টাইফয়েড জ্বর হলো, ব্যাকটেরিয়া বাহিত একটি রোগ। দ্রুত এই রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা না করানো হলে মারাত্মক ক্ষতি ঘটতে পারে। টাইফয়েড জ্বর স্যালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণে হয়ে থাকে। দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে প্রধানত দেহে এই জীবাণু ছড়ায় এবং জ্বরসহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। চলুন জেনে নিই টাইফয়েড জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে।

টাইফয়েড জ্বর বাংলাদেশে খুবই সচরাচর একটি রোগ। টাইফয়েড জ্বর স্যালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণে হয়ে থাকে। দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে প্রধানত দেহে এই জীবাণু ছড়ায়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার লোকজনের টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তস্রোতে ও অন্ত্রনালীতে এই ব্যাটটেরিয়া অবস্থান করে এবং দুষিত খাবার ও পানি গ্রহণের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিযা দেহে প্রবেশ করা জীবাণুগুলো গুণিতক আকারে বেড়ে গিয়ে রক্তস্রোতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে জ্বরসহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। আজ আমরা জানব টাইফয়েড জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে।

টাইফয়েড জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা, প্রতিকার, পরবর্তী সমস্যা ও ক্ষতিকর দিক ২০২৪ (Typhoid fever causes, symptoms, treatment, remedies, and side effects 2024)

জ্বরেরও আছে নানান প্রকারভেদ! যেহেতু জ্বর কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ, তাই প্রাথমিক অবস্থায় সব ধরনের জ্বরেই এক রকম লক্ষণ দেখা যায়। কোন জ্বরের লক্ষণ কী রকম, সেটা জানা থাকলে সংক্রমণের প্রথম থেকেই সতর্ক থাকা যায়। একটু গরম পড়লেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। টাইফয়েডের জীবাণু ছড়ায় সাধারণত অনিরাপদ পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে। সচেতন থাকলে এর সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি টাইফয়েড জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা বা প্রতিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। এতে সঠিক সময়ে আপনি টাইফয়েড শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।

Typhoid fever causes, symptoms, treatment

টাইফয়েড জ্বর হবার কারণ কী?

টাইফয়েড মূলত একটি পানিবাহিত মারাত্মক রোগ। দুই ধরনের জীবাণুর সংক্রমণে এই জ্বর হয়ে থাকে। ১) সালমোনেলা টাইফি এবং ২) সালমোনেলা প্যারাটাইফি। সালমোনেলা টাইফির সংক্রমণে টাইফয়েড জ্বর বা এন্টেরিক ফিভার হয়। সালমোনেলা প্যারাটাইফি জীবাণুর কারণে হয় প্যারাটাইফয়েড জ্বর।

প্রধানত দূষিত পানি ও খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই এই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসীনতার কারণেও এটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির মলের মাধ্যমে এইসব জীবাণু পরিবেশে ছড়ায়। অপরিষ্কার-অস্বাস্থ্যকর খাবার কিংবা হাতের মাধ্যমেও এটি ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। অধিকাংশ রেস্টুরেন্টেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবার প্রস্তুত করা হয় না, ফলে সেসব খাবারের মাধ্যমেও মানুষ আক্রান্ত হয়। এছাড়াও টাইফয়েড জ্বর থেকে সুস্থ হয়ে উঠার পরও কেউ কেউ এই ব্যাকটেরিয়া বহন করেন।

টাইফয়েড জ্বর অত্যন্ত সংক্রামক। একজন সংক্রামিত ব্যক্তির মল ও প্রস্রাবের মাধ্যমে তাদের শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া আশেপাশের পরিবেশে ছড়াতে পারে। ( source )

টাইফয়েডের ঝুঁকি কাদের বেশি?

যেকোন বয়সেই টাইফয়েড হতে পারে, তবে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলেই টাইফয়েড হবে এমন কোন কথা নাই কারণ দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে অনেক সময়ই জীবাণু দেহে সংক্রমণ করতে পারেনা। তবে কম রোগপ্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি যেমন এইচআইভি পজিটিভ ও এইডস রোগীরা সহজেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হতে পারে। যেসব এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি সেসব জায়গায় ভ্রমণ করলেও এ রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণসমূহঃ

সাধারণত রোগ-জীবাণু শরীরে প্রবেশের ১০ থেকে ১৪ দিন পর রোগের লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পেতে থাকে। জ্বর এ রোগের প্রধান লক্ষণ যা প্রথম চার-পাঁচ দিন জ্বর বৃদ্ধি পায় জ্বর কখনো বাড়ে, কখনো কমে; তবে কোনো সময় সম্পূর্ণ ছেড়ে যায় না। এর প্রধান প্রধান লক্ষণসমূহ নিম্নরুপঃ

  • ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত টানা জ্বর হওয়া।
  • জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
  • ক্ষুধামন্দা হওয়া সহ কারো কারো কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ও বমি হতে পারে।
  • গা ম্যাজ ম্যাজ করা সহ রোগীর কফ বা কাশি হতে পারে ।
  • প্রচণ্ড পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীর পেটে ও পিঠে গোলাপি রঙের দানা দেখা দিতে পারে।
  • কারো কারো জ্বরের সঙ্গে কাশি হয়।
  • হার্ট রেট বা হৃদস্পন্দন কমে যেতে পারে।
  • ওষুধ চলা অবস্থায়ও সপ্তাহ খানেক জ্বর থাকতে পারে।

কিভাবে টাইফয়েড জ্বর সনাক্তকরণ করা হয়?

পরীক্ষা নিরীক্ষার পর কেবল চিকিৎসকগণ বলতে পারবেন যে কারও টাইফয়েড জ্বর হয়েছে কিনা। টাইফয়েড দ্রুত সনাক্ত করার জন্য ব্লাড কালচার নামক রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। যদি নমুনায় স্যালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায় তাহলে প্রকার ভেদে টাইফয়েড ও প্যারা- টাইফয়েড পার্থক্য করা হয়। এছাড়া জ্বর হওয়ার ২য় সপ্তাহে “উইডাল টেস্ট” নামে এক ধরনের ননস্পেসিফিক ব্লাড টেস্ট করতে হয় যাতে টাইটার দেখে টাইফয়েড নির্ধারণ করা হয়।

টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা পদ্ধতিঃ

প্রধানত এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে ডাক্তারগণ টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা করে থাকেন। নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক শুরুর পরও জ্বর কমতে পাঁচদিনও লেগে যেতে পারে। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরও দ্রুত চিকিৎসা না করলে জ্বর সপ্তাহ বা মাসব্যাপী থাকতে পারে। এছাড়া রোগী অন্যান্য জটিলতায় ভুগতে পারে। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীকে অধিক পরিমাণে তরল খাবার দেওয়া দরকার কারণ দীর্ঘস্থায়ী জ্বর এবং ডায়রিয়ার কারণে তাঁর শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তীব্র আকারে পানি শূন্যতা দেখা দিলে শিরাপথে ওষুধ প্রদানের মাধ্যমেও তরলজাতীয় খাবার প্রদান করা যেতে পারে। টাইফয়েডের রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বর বেশি থাকলে পুরো শরীর ভেজা গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিতে হবে। অসুস্থতাকালীন সময়ে হারানো পুষ্টি পুনরুদ্ধারে উচ্চ ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। প্রতিবার বাথরুম ব্যবহারের পর হাত পানি ও সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হলো যতদিন পর্যন্ত চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক গ্রহণের পরামর্শ দিবেন ততদিন পর্যন্ত তা গ্রহণ করতে হবে।

টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে করণীয়ঃ  

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টাইফয়েড জ্বরের জন্য নির্ধারিত ভ্যাক্সিন (টিকা) গ্রহণ করা রোগটি থেকে বেঁচে থাকার একটি উপায়। ইনজেকশন এবং মুখে খাওয়ার উভয় ধরনের ভ্যাক্সিন বাজারে পাওয়া যায়। ভ্যাক্সিন গ্রহণ করার ব্যাপারে চিকিৎসককের পরামর্শ নেওয়া দরকার। সব সময়  ভ্যাক্সিন ১০০% কার্যকর  হয়না তাই ভ্যাক্সিনের পাশাপাশি নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা দরকার।

  • শাকসবজি, ফলমূল এবং রান্নার বাসনপত্র সবসময় পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
  • খাবার ভালভাবে রান্না বা সিদ্ধ করে তারপর খাওয়া উচিত।
  • খাবার গ্রহণ, প্রস্তত বা পরিবেশনের পূর্বে খুব ভালভাবে হাত ধৌত করতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ফুটানো পানি বা পরিশোধিত পানি সংরক্ষণ করতে হবে এবং পানি যাতে দূষিত হতে না পারে সে জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংরক্ষণকৃত সেই পানি পান করা উচিত।
  • বোতলজাত, পরিশোধিত বা ফুটানো পানি হতে বরফ তৈরি করা না হলে সেই বরফ মিশিয়ে পানি বা অন্য কোন পানীয় পান করা হতে বিরত থাকতে হবে।
  • রাস্তার পার্শ্বস্থ দোকানের খাবার গ্রহণ এবং পানি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
  • টয়লেট সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • টয়লেট ব্যবহারের পর, শিশুকে পরিষ্কার করার পূর্বে, খাবার প্রস্তুত বা পরিবেশন করার পূর্বে, নিজে খাওয়ার পূর্বে বা শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

টাইফয়েড জ্বর সম্পর্কে সচরাচর প্রশ্ন ২০২৪

আমাদের আশেপাশে কারোর টাইফয়েড জ্বর হলেই, আমাদের মনে কিশু প্রশ্ন উকি দেয়। যেমনঃ টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত? টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায়? টাইফয়েড জ্বরের ঔষধের নাম কি? টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে? টাইফয়েড জ্বর কি ছোঁয়াচে? টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন এর নাম কি? টাইফয়েড জ্বরের ইনজেকশন কয়টা দিতে হয়? এখন, আমরা শুধু প্রয়োজনীয় প্রশ্ন গুলোর উত্তর লিখবো।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত?

টাইফয়েড জ্বর হলে খাদ্যগ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। নিচে টাইফয়েড জ্বর হলে কী কী খাওয়া উচিত তা উল্লেখ করা হলো:

পানি এবং তরল খাবার:

– প্রচুর পানি পান করতে হবে।
– ডাবের পানি, স্যালাইন, ফলের রস (যেমন: আপেল বা আঙ্গুরের রস)।
– স্যুপ ও ঝোলজাতীয় খাবার।

হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার

– সেদ্ধ সবজি যেমন গাজর, কুমড়া, পেঁপে।
– সেদ্ধ ডাল ও পাতলা খিচুড়ি।
– ফল যেমন কলা, পেঁপে, তরমুজ।

প্রোটিন:

– সেদ্ধ মুরগির মাংস।
– ডিমের সাদা অংশ।

কার্বোহাইড্রেট

– সাদা ভাত, রুটি।
– আলু, কুমড়া।

দুধ এবং দই

দুধ এবং দই খেতে পারেন, তবে একটু ঠাণ্ডা হতে হবে।

এড়িয়ে চলুন

– ভাজা-পোড়া ও মশলাদার খাবার।
– ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড।
– মদ্যপান ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করেন। তিনি আপনার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী আরও নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে পারবেন।

কোন বয়সে এবং কারা বেশি টাইফয়েড রোগের ঝুঁকিতে থাকেন?

টাইফয়েড যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে অন্যান্যদের তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলেই টাইফয়েড হয় না, দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে অনেক সময়ই জীবাণু দেহে সংক্রমণ করতে পারে না। কিন্তু কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের, যেমন- যারা এইচআইভি পজিটিভ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া যেসব এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, সেসব এলাকা ঘুরতে গেলেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

টাইফয়েড কি ছোঁয়াচে রোগ?

টাইফয়েড ছোঁয়াচে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে, এমনকি পানির মাধ্যমেও এ রোগের জীবাণু ছড়ায়। এর জটিলতা মারাত্মক। এতে সংক্রমিত হলে রক্তক্ষরণ, মেরুদণ্ডে সংক্রমণ, অগ্নাশয়ে প্রদাহ, এমনকি কিডনিতেও বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্যারাটাইফয়েড এবং টাইফয়েড জ্বরের মধ্যে পার্থক্য কী?

টাইফয়েড সম্পর্কে মোটামোটি সবারই কম-বেশি ধারণা থাকলেও প্যারাটাইফয়েড সম্পর্কে খুব একটা মানুষ জানে না। এটি টাইফয়েড ধরনের জ্বর হলেও এই রোগের সঙ্গে মূল টাইফয়েডের কিছুটা পার্থক্য আছে। এ কারণেই অনেকে প্রথমে রোগ নির্ণয় করতে পারে না বলে ভুল চিকিৎসার আশঙ্কা বেশি থাকে। প্যারাটাইফয়েডের উপসর্গ বা লক্ষণগুলো অনেকটা টাইফয়েডের মতোই, তবে তীব্রতায় কিছুটা কম। অসুস্থতার মেয়াদও কম। জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ও ম্যাজম্যাজ, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, অরুচি, হালকা কাশির মতো উপসর্গগুলো প্যারাটাইফয়েডের লক্ষণ।

টাইফয়েড কতদিন স্থায়ী হয়?

টাইফয়েড জ্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকলেও এক-দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হতে পারে।

টাইফয়েড হলে কি গোসল করা যাবে?

টাইফয়েড হলে গোসল করা যাবে, তবে আবশ্যকীয় না। জ্বর কমানোর জন্য ঘাড় এবং কপালের পেছনের অংশে জলপট্টি দেওয়া যাবে। কুসুম গরম পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে শরীর মুছলে জ্বর কমতে সাহায্য করে। এ সময় চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ঠান্ডা পানিতে গোসল করা যাবে না। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার ফলে শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আরো বেড়ে যেতে পারে।

টাইফয়েড হলে কি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন আছে?

সব ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে না। ঘরে বসেও চিকিৎসা নেওয়া যায়। প্রাথমিক অবস্থায় ঔষধ খেলেই রোগ ভালো হয়। তবে যেহেতু টাইফয়েডের কারণে অন্ত্রনালিতে প্রদাহ হতে পারে, তাই অ্যান্টিবায়োটিক (সিরাপ বা ট্যাবলেট) অনেক সময় ঠিকমতো কাজ করে না। এজন্য কিছু ক্ষেত্রে, ঔষধগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে অনেক সময় শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিতে হয়। চিকিৎসকরা এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাই টাইফয়েড থেকে বাঁচার মূলমন্ত্র। যারা নিয়মিত ভ্রমণ করেন তাদের প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় খেতে হয়। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি পান এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সবসময় নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না ফলে টাইফয়েডে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই টাইফয়েড প্রবণ এলাকা পরিদর্শন করলে বাইরের খাবার খাওয়া এবং পানি পান করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button