রাসায়নিক নিরাপত্তা
রাসায়নিক নিরাপত্তা কি? শ্রেণীবিন্যাস, প্রকারভেদ ও তা ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা
ক্যামিকেল কি? – What is Chemical?
ক্যামিকেল হলো এমন এক স্বতন্ত্র আনবিক মিশ্রণ যা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত বা কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়।
রাসায়নিক বা ক্যামিকেল নিরাপত্তা কি? – What is Chemical Safety?
রাসায়নিক বা ক্যামিকেল নিরাপত্তা বলতে বুঝায় রাসায়নিক পদার্থের উৎপাদন থেকে শুরু করে বর্জ্য নিষ্কাশন পর্যন্ত সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার যা রাসায়নিক পদার্থ ঘটিত যেকোন দুর্ঘটনা, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও পরিবেশগত ঝুঁকি থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন রকম ক্যামিকেল ব্যবহার করে থাকি। যেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা অভাবে প্রায়ই সময়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এর ফলে প্রতি বছর শ্বাস-প্রশ্বাস, ত্বক ও গলধঃকরনের মাধ্যমে নতুন করে মানুষ অসুস্থার তালিকায় যুক্ত হচ্ছে, অগ্নি ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে ও সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। তাই সঠিক পদ্ধতি ও আইন যেনে রাসায়নিক বা ক্যামিকেল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন জরুরী হয়ে পরেছে।
রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা – Importance of Chemical Management
স্বাস্থ্য ঝুঁকি, অগ্নি ঝুঁকি সহ বিভিন্ন প্রকার ঝুঁকি ও দুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
নিচে তা উল্ল্যেখ করা হলোঃ
● অগ্নি ঝুঁকি কমিয়ে আনা,
● রাসায়নিক পদার্থের গুনগতমান অক্ষুণ্ণ রাখা,
● রাসায়নিক পদার্থের অপচয় কমিয়ে আনা,
● সুষ্ঠ কর্মপরিবেশ বজায় রাখা,
● পেশাগত স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে আনা,
● পন্যের উৎপাদন ব্যয় কমানো,
● উৎপাদন বৃদ্ধি করা,
● উৎপাদিত পন্যের গুনগতমান বজায় রাখা
ক্যামিকেলের শ্রেণীবিন্যাস ও প্রকারভেদ – Classification of Chemical Reaction
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন মানদন্ড ও লেভেল ব্যবহার করে ক্যামিকেলের তীব্রতা এবং বিষাক্ততা নিরূপণ করার চেষ্টার ফলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতো।
তাই ২০০৩ সালে OHSA (ওসা) Globally Harmonized System of Classification and Labeling of Chemicals (GHS) প্রবর্তন করে। GHS হলো শ্রেনীবিন্যাস ও লেবেলিং এর জন্য আন্তর্জাতিক মানদন্ড।
Globally Harmonized System (GHS) অনুযায়ি রাসায়নিক পদার্থ সমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যথাঃ
১. ফিজিক্যাল হ্যাজার্ড (Physical Hazard)
২. স্বাস্থ্যগত হ্যাজার্ড (Health Hazard)
৩. পরিবেশগত হ্যাজার্ড (Environmental Hazard)
Globally Harmonized System (GHS) অনুসারে বিভাগ অনুযায়ি বিপদজনক রাসায়নিক পদার্থের উদাহরন, সাবধানতা ও চিহ্নের বিস্তারিত বিবরণ নিচে দেয়া হলোঃ
১. ফিজিক্যাল হ্যাজার্ডঃ
- Flammable বা দাহ্য রাসায়নিক পদার্থঃ এরোসল, ডিজেল, হাইড্রোজেন সালফাইড, পেট্রোল ইত্যাদি। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, উতপ্ত বস্তু, অতিরিক্ত তাপ, খোলা আগুন, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে দূরে থাকতে হবে।
- Oxidizer বা জারক রাসায়নিক পদার্থঃ নাইট্রিক এসিড, সালফিউরিক এসিড, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড ইত্যাদি। এগুলো ব্যবহারের সময় অবশ্যই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামি (পিপিই) ব্যবহার করতে হবে।
- Corrosive বা ক্ষয়কারী রাসায়নিক পদার্থঃ হাইড্রোক্লোরিক এসিড, সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড, সালফিউরিক এসিড, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ইত্যাদি। ব্যবহারের সময় অবশ্যই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামি (পিপিই) ব্যবহার করতে হবে এবং নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।
- Explosive বা বিস্ফোরণ ঝুঁকি সম্পন্ন রাসায়নিক পদার্থঃ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড। ব্যবহারের সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামি (পিপিই) ব্যবহার করতে হবে।
- কম্প্রেসড গ্যাসঃ হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি। ব্যবহারের সময় অবশ্যই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামি (পিপিই) পরিধান করতে হবে ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
২. স্বাস্থ্যগত হ্যাজার্ডঃ
- Fatal বা মারাত্নক ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থঃ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (কষ্টিক সোডা), এনামেল পেইন্ট ইত্যাদি। ব্যবহারের সময় উপযুক্ত পিপিই ব্যবহার করতে হবে এবং যেকোন প্রকার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- Intense Baneful বা তীব্র বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থঃ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি। এ ধরনের পদার্থ বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক বলে এগুলো ব্যবহারের সময় সতর্ক মূলক ব্যবস্থা হিসেবে পিপিই পরিধান করতে হবে ও কোন কিছু খাওয়া যাবে না।
- Harrowing বা যন্ত্রনাদায়ক রাসায়নিক পদার্থঃ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড ইত্যাদি। ব্যবহারের সময় অবশ্যই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামি ব্যবহার করতে হবে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৩. পরিবেশগত হ্যাজার্ডঃ
এটি পরিবেশের উপর ঝুঁকি সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থ। উদাহরনঃ অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, ইত্যাদি। এ ধরনের পদার্থ পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ জন্য রাসায়নিক বর্জ আবাদি জমিতে ব্যবহার অথবা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।