পড়াশুনা

শিক্ষা সফর অনুচ্ছেদঃ শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট ২০২৪

শিক্ষা সফর অনুচ্ছেদঃ শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট ২০২৪! শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা অ্যাসাইনমেন্টে আপনাকে স্বাগতম। শিক্ষা সফর প্রতিটি শিক্ষার্থীদের জীবনের এক মজার অভিজ্ঞতার নাম।প্রত্যেক বছর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছরের প্রথম দিকে শিক্ষা সফরের তারিখ নির্ধারিত হয়।  প্রতিটি শিক্ষার্থী জীবনের তাই শিক্ষা সফর এক বহুল আকাঙ্খিত একটা ভ্রমন।

প্রতিটি শিক্ষার্থী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য, শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসফরের দিন নিজেদের পছন্দমতো পোশাক পরে নিজেদের পছন্দমতো সেজে মজার ,আনন্দ এবং হয় হুল্লোড় এর মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করে থাকে।

মেয়েদের ইসলামিক নাম এর অর্থসহ তালিকা (2800+ নাম)

শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা
শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা

সেদিন থাকেনা কোনো ক্লাসের পড়া, থাকেনা কোনো পরীক্ষা । শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো এক ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণ করে। খাওয়া দাওয়া ,জ্ঞান অর্জন করা এবং আনন্দ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করে।

ছাত্রজীবনে শিক্ষা সফর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এক দিকে যেমন শিক্ষার অঙ্গ অন্যদিকে শিক্ষাকে ধরে রাখতে চাঞ্চাল্য সজীব মন গঠনে শিক্ষা সফরের গুরুত্ব অপরিসীম।

অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষাসফরের দিন শিক্ষার্থীদের তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার জন্য এসাইনমেন্ট দিয়ে থাকে। উক্ত এসাইন্টমেন্টে তাদের শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়ে থাকে।শিক্ষা সফরের এসাইনমেন্ট এর জন্য চারটি জিনিস প্রয়োজন।তা হলোঃ

  •  
    শিরোনাম
  •  
    ধন্যবাদ জ্ঞাপন সুচনা
  •  
    বর্ননা
  •  
    উপসংহার

আজকে আমি তেমনি একটি শিক্ষা সফরের এসাইন্টমেন্ট কিভাবে লিখতে হয় তার নমুনা আপনাদের জানাবো। আশা করি আপনারদের উপকার হবে।

শিক্ষা সফর অভিজ্ঞতা অনুচ্ছেদ লিখন (৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণি)

ভূমিকা – শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতাঃ

“শিক্ষা সফর” নামটা শুনলেই আমরা বুঝতে পারি এখানে কিছু একটা শিখা যায় ও নতুন নতুন অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। আমার নিজের জীবনের একটি শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিচে তুলে ধরলাম। জ্ঞান লাভের উপায় বা মাধ্যম হল দুটি। একটি হল বই পড়া, অন্যটি শিক্ষাসফর। বই পড়ে তত্ত্বগত জ্ঞান লাভ করা যায়। আরো জানা যায় অনেক তথ্য। কিন্তু এগুলোই যথেষ্ট নয়।

শিক্ষাসফরের গুরুত্ব – Shikkha Sofor Assignment (1) :

গভীরভাবে জানা যায় অতীত উপমহাদেশের ইতিহাস লেখার রেওয়াজ ছিল না। যা ছিল তা হল কাব্য, মহাকাব্য, রামায়ণ-মহাভারত বেদ-পুরাণ ইত্যাদি।

যে সময়ে উপমহাদেশের ইতিহাস লেখা হত না সে সময়কার ঐতিহাসিকগণ উপাদানের জন্য আমাদের বিদেশি পর্যটকদের উপর নির্ভর করতে হয়েছে। এখানেই বোঝা যায় সফরের গুরুত্ব কি অপরিসীম।

ঐতিহাসিকগণ একের পর এক দেশ সফর করে মানব সভ্যতার ইতিহাস রচনায় অতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গিয়েছেন। এ সফর বিশ্ব-ইতিহাস রচনায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, তেমনি বিশ্ব সাহিত্যকেও সমৃদ্ধ করেছে।

শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট (১)

আমার জীবনে সবে মাত্র ১৪ টি ক্যালেন্ডার অতিক্রান্ত হয়েছে। এরই মাঝে লোকমুখে বর্ণিত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, পাঠ্যপুস্তকে রঙিন ছবি এবং নদনদী পাহাড়-পর্বত সমুদ্র রাজার কাহিনী স্মৃতিস্তম্ভ ঐতিহাসিক উপাদান প্রভৃতি গল্পে মনকে স্থির রাখতে না পেরে যেন বারে বারে এক কল্পনার উদয় ঘটেছে হৃদয়ে।তারি মাঝে হঠাৎ শিক্ষকদের শিক্ষা সফরে ভ্রমণে যাওয়ার প্রস্তাব যেন উদ্দেশ্যে যেন বাস্তব রূপ নিতে চলেছে। এই কৌতুহলকে বাস্তবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার লক্ষ্যে ভ্রমণ হয়ে উঠেছিল এক অফুরন্ত কৌতুহল।

শিক্ষা সফরে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতিঃ

সফরের আগে আমি বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সেটি ছিল অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা।সফরের আগের দিন চুল কাটা ও জামাকাপড় ইস্ত্রি করা সেরে নিয়েছিলাম। একটি ব্যাগে জামাকাপড় প্যাক করে নিয়েছিলাম। একটি ফুটবল জোগাড় করে রেখেছিলাম সাগর পাড়ে খেলার জন্য। আমাদের গন্তব্য ছিল চট্টগ্রাম ক্যাপে ২৪ পার্ক ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।

রাতে ঘুমানোর আগে ফোনে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। রাত ৪ টা বাজে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ ও গোসল সেরে নেই।এরপর হালকা নাস্তা করি। ৪ টা ৪০ মিনিটের দিকে ব্যাগ ও ফুটবল নিয়ে শিক্ষা সফরের গাড়িতে উঠার জন্য রওনা দেই। সাথে একটি পানির বোতল ও শুকনো কিছু খাবার নিয়েছিলাম।

শিক্ষাসফরের গাড়িতে এক নতুন অভিজ্ঞতাঃ

শিক্ষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সবাই জরুরি প্রয়োজন সেরে ৫ টা ২০ মিনিটে গাড়িতে উঠি। ৫ টা ৩০ মিনিটে সোনাইমুড়ী থেকে গাড়ি ছাড়ে। উল্লেখ্য, আমরা নোয়াখালী থেকে সফরে যাচ্ছিলাম।গাড়িতে এমন কিছু বিনোদনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল যা আগে কখনো দেখিনি। আমরা ১ টি বাসে করে ৫০ জন যাচ্ছিলাম।

গাড়িতে মাইকের ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা একে একে গান, কবিতা, ছড়া, কৌতুক উপস্থাপন করেন। যা আমাকে বিমোহিত করেছিল।আমি আমার প্রিয় কয়েকটি গান গেয়েছিলাম।

সবাই হাত তালি দিয়ে আমাকে অভ্যর্থনা জানায়। সেটি ছিল আমার জীবনের প্রথম মাইকে গাওয়া গান।আমরা ট্যুরিস্ট স্পটে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত নানা রকম আনন্দ ও বিনোদনে মেতে ছিলাম। আমাদের শিক্ষকরাও নানাভাবে আমাদের বিনোদন দেওয়া চেষ্টা করেছেন।যাওয়ার সময় আমরা পাহাড়তলীর মনোমুগ্ধকর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করি। গাড়ি থেকে পাহাড়গুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল সেগুলো দূরে আকাশের সাথে মিশে গেছে।

শিক্ষা সফরে চট্টগ্রাম ক্যাপে ২৪ এর অভিজ্ঞতাঃ

চট্টগ্রাম শহর থেকে ভাটিয়ারির দিকে যেতেই সবাই আনন্দে মেতে উঠেন। কারণ, সেই পথটি ছিল পাহাড়ি পথ। উঁচু নিচু পথে গাড়ি একবার উপরে উঠে, একবার নিচে নামে। সবার চোঁখ ছিল পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন গাছ ও লেকের দিকে। কি মনোরম সেই পরিবেশ!অবশেষে আমরা ক্যাপে ২৪ পার্কে পৌঁছাই৷ এটি ছিল সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে। সেখানে সব জায়গায় সেনাবাহিনীরা টহলে ছিল। এমনকি পার্কের পরিচালনার দায়িত্বে সেনা সদস্যারা ছিল। তাই নিরাপত্তা নিয়ে কোনোরূপ সমস্যা ছিলনা।

পার্কে ঢুকতেই আমরা গাছের উপর কিছু কাঠবিড়ালিকে ছোটাছুটি করতে দেখি। পার্কের ভিতরে কৃত্রিম ভাবে তৈরি মনোরম একটি ঝর্ণা ছিল।ঝর্ণার পানি বয়ে গিয়ে পড়ে একটি লেকে। সেই লেকটি ছিল অসম্ভব চমৎকার। সেখানে নৌকা ভ্রমণ করার সুযোগ আছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই লেকে পা দিয়ে চালানো ছোট ছোট নৌকা দিয়ে ভ্রমণ করেছিল।পার্কে কয়েকটি রাইড ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের ফুলের গাছ ও অনেক মানুষের সমাগম ছিল।

আমরা কয়েকজন জাপানি মানুষের সাথে খোশগল্পও করেছিলাম। তারা জানান, তারা বাংলাদেশে এসে অনেক খুশি। তারা এদেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ঘুরেছেন যা তাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। এদেশের মানুষদের তাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। সুযোগ পেলে তারা আবারো বাংলাদেশে ঘুরতে আসবেন বলে জানান।পার্কের পশ্চিম দিকে পাহাড়ের পাদদেশে একটি খোলা মাঠ ছিল। সেখানে আমাদের কয়েকটি খেলার আয়োজন করা হয়। আমরা এখানে প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মতো ছিলাম।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত নিয়ে শিক্ষাসফরের অভিজ্ঞতাঃ

ক্যাপে 24 থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বা সী বিচের উদ্দেশ্যে রওনা হই। সাগর আমাকে খুব টানে। তাই সেই মূহুর্তে আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম।আমরা ৩ টা ৩০ মিনিটের দিকে সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাই। সাগর দেখেই মন প্রাণ ভরে গেল। সেখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। এ যেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের এক মিলন মেলা।আমরা সাগর পাড়ে ঘন্টাখানেক ফুটবল খেলেছিলাম। তারপর সাগরে নেমে লাফ ঝাপ তো আছেই। স্পীড বোটে করে সাগর ভ্রমণ ছিল বেশ আনন্দদায়ক।

বীচে একটি তীক্ত অভিজ্ঞতাও আছে। সেটি হচ্ছে ছবি তোলা নিয়ে। সেখানে আমরা ফটোগ্রাপারদের ক্যামেরা দিয়ে কিছু ছবি তুলেছিলাম। কিন্তু তারা এক রকম আমাদের সাথে প্রতারণা করেন।আমরা ছবি তুলেছিলাম ২০ কপি। কিন্তু তারা বলছে ৭০ কপি এবং সবগুলোই নিতে হবে। অর্থাৎ জোরপূর্বক আমাদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।এই তিক্ত অভিজ্ঞতা বাদ দিলে বাকিটা সবই ঠিক ছিল। আমরা সাগর পাড়ের দোকান থেকে ঝিনুকের মালা, আচার, চকলেট ও কিছু খেলনা কিনেছিলাম।

শিক্ষা সফর থেকে বাড়ী ফেরাঃ

সন্ধ্যা ৬ টার দিকে আমাদের বাস নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে আমারা বাড়ী পৌঁছাই। এই শিক্ষা সফরটি ছিল আমার জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা যা আমাকে নতুন নতুন আনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে।

শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট (২)

শিক্ষা সফরের ভূমিকাঃ

আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব কেউ দূরে থাকলে তার বাড়িতে ঘুরতে যাওয়া ভ্রমণ হলেও ভ্রমণ মানুষের সুদূর বিলাসী জিনিস।

সবাই ভালবাসে সরমর পেরিয়ে মৌলিক হিমালয় জয় করে কৃষ্ণবর্ণ অরণ্যে মশাল জ্বেলে পথ খুঁজে জীবন আজীবন বেড়াতে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে এসে সামান্য পদ ঘুরেছি তাতে আমার মনের সাধ মেটেনি।

শিক্ষা সফরে উদ্দেশ্যঃ

শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য হল- বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা, বাইরের পরিবেশ থেকে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিষয়েই পাঠদান করা হয়ে থাকে। সে সবের প্রায় প্রতিটি বিষয়ই আমাদের জীবন ও জীবন ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত। তাই, পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে সে সমস্ত বিষয়ের সাথে চাক্ষুস পরিচয়ের গুরুত্ব অস্বিকার করা যায় না।

পৃথিবীর কত যে বিচিত্র স্থান আছে, বৈচিত্র্যের কথা বই পড়ে সবটুকু জানতে পারি না, চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার দ্বারা তা সম্পূর্ণ নতুনভাবে আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। কত বিচিত্র দেশ, বিচিত্র তার অধিবাসী- আরো বিচিত্র তাদের সাংস্কৃতিক জীবনধারা ও সামাজিক রীতিনীতি। দিকে দিকে কত অরণ্য-সমুদ্র-মরু-পর্বত।

নিসর্গ প্রকৃতির কত অফুরান বৈভব, কত পশু-পাখি, জীবজন্তু। আমরা দেশ শিক্ষা সফরের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সেগুলোকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারি।

ফলে শিক্ষা-সফর শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা পুঁথির ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ। অধীত-বিদ্যা তাই আমাদের মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে না। মহৎ উপলব্ধিতে সেই শিক্ষা পূর্ণ, সার্থক হয় না। রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন, ‘প্রত্যক্ষ বস্তুর সহিত সংস্রব ব্যতীত জ্ঞানই বলো, চরিত্রই বলো, নির্জীব ও নিষ্ফল হতে থাকে।

তাই পুঁথির বিদ্যার সঙ্গে চাই বাস্তবের রাখী বন্ধন। মানুষে মানুষে তখন অনুভব করে প্রাণের মিতালি। ইতিহাস পাঠের একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিলালিপি, পাণ্ডুলিপি প্রভৃতিতে। সোনারগাঁ, ময়নামতি, পাহাড়পুর, সুন্দরবন এসব যদি নিজের চোখে দেখা যায় তবে বইয়ের বিবরণ জীবন্ত হয়ে মনের পটে স্থায়ী হয়ে থাকে।

ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় ইতিহাসের কত অতীত কীর্তি, কত কাহিনী আমাদের কাছে জীবন্ত হয়ে ওঠে। আমরা যেন সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েও শুনতে পাই তার শাশ্বত বাণী।

সে ক্ষেত্রে শিক্ষা সফরের কোনো বিকল্প নেই। এমনিভাবে ভাষাতত্ত্বের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রত্যক্ষ পরিচয়ের জন্য রয়েছে প্রাচীন ভাষাগুলোর লিপি, ভাষাতত্ত্ব ও তার বিবর্তনের ধারা; ভূগোল শিক্ষার্থীদের সাথে প্রত্যক্ষ পরিচয়ের জন্য রয়েছে বিভিন্ন দেশের মাটি, শিলা, পাথর ইত্যাদি; প্রাণি বিজ্ঞানের ছাত্রদের প্রত্যক্ষ পরিচয়ের জন্য রয়েছে প্রাচীন ফসিল ও চিড়িয়াখানায় সুরক্ষিত বিভিন্ন জীবজন্তু; অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের উপাদান ও উপকরণ।

তাই শিক্ষা সফর না করলে শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। শিক্ষার সঙ্গে তার আধুনিক-সম্পর্ক। পাশ্চাত্য দেশে শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষা সফরের আত্মার সম্পর্ক।

সফরের সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্কঃ

শিক্ষা সফর শিক্ষার একটি প্রধান অঙ্গ। জীবনের সাথে শিক্ষার সম্পর্ক যেমন নিবিড়, শিক্ষার সঙ্গে সফরের সম্পর্কও তেমন নিবিড়। শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফরের গুরুত্ব রয়েছে।

শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার মধ্যে পূর্ণতা আনার জন্যই শিক্ষাসফর। দেশ ভ্রমণের সাথে এর কিছুটা পার্থক্য রয়েছে; দেশভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য আনন্দ তার পাশাপাশি জ্ঞানার্জন।

কিন্তু শিক্ষাসফরের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষাগ্রহণ। পৃথিবীর কত যে বিচিত্র স্থান আছে, তার বৈচিত্র্যের কথা বেই পড়ে সবটুকু জানতে পারি না কিংবা উপলব্ধি করতে পারি না, চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার দ্বারা তা সম্পূর্ণ নতুনভাবে আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

কত বিচিত্র দেশ, বিচিত্র তার অধিবাসী- আরো বিচিত্র তাদের সাংস্কৃতিক জীবনধারা ও সামাজিক রীতিনীতি। শিক্ষা সফর দ্বারা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সেগুলোকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারি।

শিক্ষাসফর না করলে শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। গ্রন্থের বাইরে জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার দ্বারা যে শিক্ষালাভ হয়, তা হয় বাস্তবধর্মী। এই শিক্ষার জন্যই শিক্ষাসফরের আবশ্যকতা অপরিহার্য।

বাংলাদেশে শিক্ষা সফরের জন্য পর্যটন স্থান সমূহঃ

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের বেলাভূমি প্রমোদভ্রমণ কেন্দ্র হিসেবে প্রকৃতি নিজের হাতে গড়ে তুলেছে পৃথিবীর এক রহস্যময় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। যা পর্যটকদের কাছে খুবই লোভনীয় একটি স্থান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।

আমাদের দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, বিশেষভাবে মৎস্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখানে এসে বিভিন্ন সামুদ্রীক পরিবেশ, সামুদ্রীক প্রাণী ও মৎস্যের সাথে পরিচিতি লাভ করে। অপরদিকে খুলনা জেলার সুন্দরবনও একইভাবে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রান্তবর্তী জনপদ রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি।

সিলেটের চা বাগান, তামাবিল, জাফলং, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, চট্টগ্রামে ফয়েজ লেক, যমুনা সেতু ইত্যাদি পর্যটনের স্থান হিসেবে বেশ সমাদৃত। এসব স্থানে এসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরিবেশ, বনায়ন, ভূ-প্রকৃতি এবং বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষের সাথে পরিচিতি লাভ করতে পারে।

শিক্ষা সফরে বাংলাদেশের পুরাকীর্তিঃ

বৌদ্ধযুগে রাজশাহী জেলার পাহাড়পুরে প্রভু-বুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ সত্যিই দেখার মত এবং এর থেকে অনেক কিছু জানার মতও আছে। পাহাড়পুরের বৌদ্ধ-আশ্রম, আশ্রমের কিছুদূরে সত্যপীরের-ভিটা, প্লেটের উপর তাম্রলিপি ও ব্রোঞ্জ-নির্মিত মূর্তি- এসব পুরাকীর্তির নিদর্শন এখানে রয়েছে।

এরকম আরো কয়েকটি স্থানের নাম হল- বগুড়া জেলার ইতিহাস-প্রসিদ্ধ করতোয়া নদীর তীরে এবং ঢাকা-দিনাজপুর বিশ্বরোডের পাশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মহাস্থানগড়। প্রাচীন বৌদ্ধযুগের বহু ধ্বংসাবশেষ এখানে বিদ্যমান।

এছাড়া নওগাঁ, জয়পুরহাট, কুমিল্লা-ময়নামতিতেও রয়েছে বৌদ্ধ সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ। ঢাকার আহসান মঞ্জিল, ঢাকেশ্বরী মন্দির, কার্জন হল, লালবাগের কেল্লা, হোসনী-দালান, সোনার-গাঁ লোকশিল্প-যাদুঘর; দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ,

নোয়াখালীর বজরা মসজিদ- এ সবই প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন ও ইতিহাস প্রসিদ্ধস্থান হিসেবে আমাদের দেশ ইতহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সভ্যতায় অনেক সমৃদ্ধ হয়ে আছে, ফলে সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা, বিশেষভাবে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসব অঞ্চলে শিক্ষাসফরের মাধ্যমে বেশ উপকৃত হতে পারে।

শিক্ষা সফরের প্রক্রিয়াঃ

বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষা সফরের সম্পর্ক; তাই বিষয় নির্ধারণ করে শিক্ষা সফরের জন্য স্থান নির্বাচন করতে হবে।

সাধারণত দলীয়ভাবে শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষকগণ শিক্ষাসফরে গিয়ে থাকেন।

উপসংহারঃ

শিক্ষাকে বাস্তবধর্মী ও আরো অধিক কার্যকরী করার জন্য শিক্ষাসফরের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

শিক্ষা সফরকে শিক্ষারই একটি অনিবার্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট (৩)

শিক্ষা সফরে ভ্রমণের স্থান নির্ধারণঃ

ভ্রমণের স্থান নির্ধারণ করা ছিল আমাদের কাছে কঠিন একটি কাজ। ইতিহাস স্যারের কাছে ঢাকা সোনারগাঁও এর গল্প শুনে স্যারের প্ররোচনায় এবং অভিভাবকদের মতামত নিয়ে আমরা স্থির করলাম ঢাকার সোনারগাঁও এই আমরা ভ্রমণে যাব। মার্চের ১৭ তারিখে স্থির হল আমাদের ভ্রমণে তারিখ।

শিক্ষা সফরের যাত্রা শুরুঃ

যথারীতি মার্চের ১৭ তারিখ সকাল সাতটায় আমরা সকলে স্কুল প্রাঙ্গণে উপস্থিত হলাম। সকাল সাড়ে সাতটায় আমাদের বাস রওনা দিল। আমাদের অভিভাবকদেরকে আমরা বিদায় জানালাম এবং খুশিমনে আমাদের গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করলাম।

শিক্ষা সফরে সোনারগাঁও এর ইতিহাসঃ – শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা

শিল্পকলা সংস্কৃতি ও সাহিত্য সোনারগাঁও ছিল বাংলাদেশের এক গৌরবময় জনপদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত নৈসর্গিক পরিবেশে প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁওয়ে নামটির উদ্ভব ঘটেছে সুবর্ণগ্রাম থেকে।আবার অনেকের মতে বারোভূঁইয়ার প্রধান ঈশা খাঁ স্ত্রী সোনাবিবির নামে সোনারগাঁও এর নামকরণ করা হয়েছে।আনুমানিক ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলে মুসলিম আধিপত্যের সূচনার পর আওরঙ্গজেবের আমলে বাংলার রাজধানী ঢাকা ঘোষণা হওয়ার আগে পর্যন্ত মুসলিম সুলতানের রাজধানী ছিল সোনারগাঁও।যদিও তখন প্রাচীন এ রাজধানীর নাম পানাম নামেই পরিচিত ছিল। বর্তমানে সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা।

সোনারগাঁ গিয়ে যা যা দেখলামঃ – শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা

সোনারগাঁওয়ে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে অন্যতম হলো লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, জয়নুল আবেদীন স্মৃতি জাদুঘর, পানাম সিটি ও বাংলার তাজমহল। বাংলার তাজমহল ছাড়া বাকি জায়গা গুলো খুবই কাছাকাছি।

সোনারগাঁ কেন বিখ্যাতঃ – শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা

প্রাচীন বাংলার বিখ্যাত জনপদ সহস্রা বছরের ইতিহাস হল সোনারগাঁ। বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজধানীর নাম সোনারগাঁ। সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর এর জন্য বিখ্যাত। এখানে উৎপাদিত মসলিন কাপড় একসময় গোটা বিশ্বে বিখ্যাত ছিল।এই কাপড় এত সূক্ষ্ম সুতার তৈরি হতো যে মসলিনের তৈরি একটি বড় ধরনের চাদর দিয়াশলাইয়ের প্যাকেটে ঢুকিয়ে রাখা যেত।সোনারগাঁর গৌরব আরো অনেক কারণে। ইতিহাস থেকে জানা যায় সোনারগাঁ যখন শহর ছিল তখন ঢাকা ছিল গ্রাম। আর ঢাকা যখন শহর হলো তখনও কলকাতা ছিল গ্রাম।

শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা ভিডিও

উপসংহারঃ

সোনারগাঁও হল আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজধানীর নাম হল সোনারগাঁও। সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর বিখ্যাত। এখানে দেশ-বিদেশের অনেক মানুষ আসে। তারা জাদুঘর ও এর বিচিত্র রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করে। যা আমাদের বাংলাদেশের জন্য অনেক গৌরবের।

শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button