রাসায়নিক নিরাপত্তা
রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ঝুঁকি ও এর সংস্পর্শে আসলে করনীয় কি?
রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ঝুঁকি সমূহ – Risks of Using Chemicals
অনিরাপদ ও অরিক্ষিত ব্যবহারের ফলে সৃষ্টি ঝুঁকি হচ্ছে রাসায়নিক ঝুঁকি। তাছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন রকমের তরল পদার্থ, কাজ চলাকালীন সময়ে উৎপাদিত ধূলা, ধোঁয়া, গ্যাস ও বাষ্প থেকে রাসায়নিক ঝুঁকির উৎপত্তি হয়।
এ সকল রাসায়নিক পদার্থ নিঃশ্বাস, চামড়া বা ত্বকের সংস্পর্শ এবং গলাধঃকরনের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী রোগের সৃষ্টি করে। অনিরাপদভাবে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে লিভার ও কিডনির ক্যান্সার ছাড়াও চুলকানি, ফুয়াফুসের সমস্যা, মাথাব্যাথা, ত্বকের জ্বালাপোড়া, হজম জনিত সমস্যা, গর্ভধারনে নানান জটিলতা সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
অনিরাপদভাবে ক্যামিকেল বা রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহারের ফলে সম্ভাব্য ঝুঁকি সমূহ নিন্মরূপঃ
● দাহ্য পদার্থের নিকটে আসলে আগুন ধরতে পারে,
● উচ্চ তাপে ক্যামিকেল সংরক্ষন করাহলে বিস্ফোরণ হতে পারে,
● ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে বা কুঁচকে যেতে পারে,
● শরীরের কোন অংশ পুড়ে যেতে পারে,
● ত্বকে ফোষ্কা পড়া, র্যাশ বা চুলকানি হতে পারে,
● অস্বস্তি বোধ করা, চোখ জ্বালাপোড়া, ব্যাথা বা লাল হয়ে যেতে পারে,
● ক্যামিকেলের ধুলা বা ধোঁয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশের করলে ফুসফুসের মারাত্নক ক্ষনির সম্ভবনা থাকে,
● পরিশোধন না করে ক্যামিকেল উন্মুক্ত পরিবেশে নিষ্পত্তির ফলে বায়ু, পানি ও মাটি দূষিত হয়ে জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
রাসায়নিক দ্রব্য মানবদেহে প্রবেশের পথ – Routes of Chemical Exposure
রাসায়নিক দ্রব্য মানবদেহে প্রবেশের পথ ৩ টি। যথাঃ
১. শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে,
২. ত্বকের মাধ্যমে,
৩. গলধঃকরন বা গিলে ফেলার মাধ্যমে।
রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে আসলে করনীয় কি? – What is actually to do with the Contact of Chemicals
রাসায়নিক দ্রব্য বা ক্যামিকেল বিভিন্ন উপায়ে মানুষের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী মারাত্নক ক্ষতি করে। তাই এর সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিচে তা আলোচনা করা হলোঃ
- শরীরে লাগলেঃ ক্যামিকেল শরীরে লাগলে সাথে সাথে প্রচুর পরিষ্কার পানি ও সাবান দিয়ে আক্রান্ত স্থান ধুয়ে ফেলতে হবে। শরীরের পোশাক, আংটি, বেল্ট, চুড়ি ইত্যাদি থাকলে দ্রুত খুলে ফেলতে হবে। কারন কিছু ঝুকিপূর্ণ ক্যামিকেল আছে যেগুলো শরীরের চামড়া ও মাংস পুড়িয়ে ফেলে বা ফুলে উঠে।
- চোখের সংস্পর্শে আসলেঃ কোন রাসায়নিক পদার্থ চোখে প্রবেশ করলে চোখের পাতা খোলা রেখে চোখে প্রচুর পরিমান পানি ঢালতে হবে। ১৫ মিনিট বা তার অধিক সময় ধরে নির্দিষ্ট কল দ্বারা চোখ ভালো করে ধুতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারের নিকট যেতে হবে।
- নিঃশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলেঃ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলে উক্তব্যক্তি কে দ্রুত খোলা বাতাসের নিকট নিতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
- মুখে প্রবেশ করলেঃ ক্যামিকেল মুখের ভেতর প্রবেশ করলে বা গিলে ফেললে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
রাসায়নিক পদার্থ বা ক্যামিকেল ব্যবহারের সাধারণ নির্দেশনাবলী – General Instructions for using Chemicals
নিরাপদে রাসায়নিক পদার্থ বা ক্যামিকেল ব্যবহার ও গুদামজাতকরনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সম্পদের অনাকাক্ষিত ঝুঁকি এড়ানো।
নিচে এটি ব্যবহারের নির্দেশনা সমূহ উল্ল্যেখ করা হলোঃ
- রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যাতে চোখ ও শরীরে না লাগে,
- রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের পর ভাল করে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে,
- উপযুক্ত পিপিই মাস্ক, এপ্রোন, নিরাপদ চশমা, হাতমোজা, গামবুট ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে,
- ক্যামিকেল ব্যবহার ও সংরক্ষণের স্থানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে,
- ফ্লোরে ক্যামিকেল পরেগেলে সাথে সাথে স্পিল কিট দিয়ে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে,
- সকল প্রকার খাবার, পানীয় ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে,
- সঠিক মাত্রায় ক্যামিকেল ব্যবহার করা উচিত,
- লেভেলবিহীন ক্যামিকেল ব্যবহার করা যাবে না,
- অনুমতি ও অভিজ্ঞতা ছাড়া কোন ক্যামিকেল মিশ্রিত করা যাবে না,
- সহজে জ্বলে উঠে এমন কোন দাহ্য বস্তুর নিকটে রাসায়নিক পদার্থ রাখা যাবে না,
- আগুনের প্রকৃতির ভিত্তিতে সঠিক পদ্ধতিতে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রসমূহ ব্যবহার করতে হবে,
- লেবেল বিহীন পাত্র বা খালি পাত্রে ক্যামিকেল ঢালা বা সংরক্ষণ করে যাবে না,
- কাজ শেষ হলে কন্টেইনারের মুখ ভালো করে আটকিয়ে রাখতে হবে ও খালি কন্টেইনার নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে,
- খাবার গ্রহণের পূর্বে ও কাজ শেষ হলে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।