স্বাস্থ্য

আনারসের ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা (Pineapple Benefits and Harms)

আনারসের ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা (Pineapple Benefits and Harms)! আনারস, যা বৈজ্ঞানিকভাবে Ananas comosus নামে পরিচিত, এটি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। আনারস রসালো ও তৃপ্তিকর সুস্বাদু ফল। ফলটিতে আঁশ ও ক্যালোরি ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম থাকে। কলস্টেরল ও চর্বিমুক্ত বলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর জুড়ি নেই। আসুন জেনে নিই আনারসের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে। আনারস মিষ্টি, রসালো ও তৃপ্তিকর সুস্বাদু ফল যা মানব দেহের জন্য অনেক উপকারি। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম রয়েছে। ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ ও ক্যালোরি রয়েছে। এটি কলস্টেরল ও চর্বিমুক্ত। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ ফলের জুড়ি নেই। এখানে আনারসের ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

আনারসের ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা (Pineapple Benefits and Harms)

১. পুষ্টি সমৃদ্ধ:

আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, ভিটামিন বি৬ এবং ফাইবার থাকে যা শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

আনারসে উপস্থিত ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এটি শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে যা বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

৩. প্রদাহ হ্রাস:

আনারসে ব্রোমেলাইন নামক একটি এনজাইম থাকে যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এটি আথ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের উপশম করতে পারে।

৪. হজমে সহায়ক:

আনারসে উপস্থিত ব্রোমেলাইন হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক। এটি প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

৫. ক্যান্সার প্রতিরোধ:

আনারসে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ব্রোমেলাইন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

৬. হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো:

আনারসে উপস্থিত ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্তনালীর স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

৭. হাড়ের স্বাস্থ্য:

আনারসে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। এটি হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সহায়ক।

৮. ওজন নিয়ন্ত্রণ:

আনারসে ক্যালোরি কম থাকে এবং ফাইবার বেশি থাকে যা দীর্ঘ সময় পেট ভরতি রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

৯. চোখের স্বাস্থ্য:

আনারসে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং বিটা-ক্যারোটিন চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। এটি চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে পারে।

১০. ত্বকের যত্ন:

আনারসে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। এটি ত্বকের বলিরেখা কমায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে।

১১. কিডনির স্বাস্থ্য:

আনারস কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক। এটি শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

১২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:

আনারসে উপস্থিত পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

১৩. মানসিক স্বাস্থ্য:

আনারসে উপস্থিত ট্রিপটোফ্যান মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়ক যা মেজাজ উন্নত করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।

১৪. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী:

আনারসের ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

১৫. ডিটক্সিফিকেশন:

আনারস শরীরের টক্সিন দূর করতে সহায়ক। এটি লিভার এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীরকে ডিটক্সিফাই করে।

১৬. আঘাত নিরাময়:

আনারসে উপস্থিত ব্রোমেলাইন আঘাত নিরাময়ে সহায়ক। এটি ক্ষত নিরাময়ের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।

১৭. এনার্জি বৃদ্ধি:

আনারসে উপস্থিত ভিটামিন বি৬ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান এনার্জি বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এটি ক্লান্তি দূর করে এবং শরীরকে চাঙ্গা রাখে।

১৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:

আনারসে ফাইবার বেশি থাকে এবং চিনি কম থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

১৯. শ্বাসকষ্ট কমানো:

আনারসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ব্রোমেলাইন শ্বাসকষ্ট কমাতে সহায়ক। এটি অ্যাজমা এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত রোগের উপশম করতে পারে।

২০. মুখের স্বাস্থ্য:

আনারসে উপস্থিত ভিটামিন সি মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। এটি মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক এবং মুখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।

আনারসের কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

  • আনারসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা থাকলেও এটি সবার জন্য ঠিক স্যুট করে না। অনেকেরই আনারস এলার্জির সমস্যা যেমন বিভিন্ন ধরনের চুলকানি, ফুস্কুরি ইত্যাদি হতে পারে।
  • আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক চিনি যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। আনারসের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহে রক্তের চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা আনারস বেশি না খেয়ে সপ্তাহে ২ দিন খেতে পারেন।
  • আনারস একটি এসিডিক ফল। তাই খালি পেটে ফলটি খেলে পেটে প্রচন্ড ব্যথার তৈরী হতে পারে। আনারস আর দুধ এক সাথে খাওয়া যায় না, এটি একটি কুসংষ্কার। এখন পর্যন্ত আনারস এবং দুধের মাঝে এমন কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া খুঁজে পাওয়া যায়নি যার ফলে এদেরকে এক সাথে খেলে সেটা মানুষের জীবনহানি করবে। বর্তমানে অনেক খাবারেই দুধ ও আনারস একসাথে মেশানো হয় এবং সারা বিশ্বেই তা খাওয়া হয়। কোন গ্যাস্ট্রিকের রোগী যদি খালিপেটে আনারসের সাথে দুধ খায় তাহলে তাঁর পেটে প্রচন্ড ব্যথার “ফুড ট্যাবু” এর উদ্ভব হতে পারে।
  • রক্ত তরল করার জন্য যে ওষুধ বানানো হয় তাতে আনারস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফল দেহে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতে বাঁধা প্রদান করে থাকে। তাই যাদের আনারস খেলে এ সকল সমস্যায় ভুগেন তারা অবশ্যই আনারস থেকে দূরে থাকবেন।

আনারস নিয়মিত খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে উপরের সবগুলো উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। তবে, অতিরিক্ত আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত কারণ এটি মুখে অম্লতার সৃষ্টি করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button