ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা কি? – What is Building Safety?
অগ্নিঝুকি প্রতিরোধ ও যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে ভবনকে রক্ষা ও ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে যে সকল নিরাপত্তা কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহন করা হয় তাকে ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বলে।
ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভবনের আকার ও তার ব্যবহারের ধরনের উপর নির্ভর করে। ভবন ছোট অথবা বড় যাই হোক না কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে।
ভবনের শ্রেণিবিভাগ – Building Classification Types
বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার অনুযায়ী প্রতেকটি ভবনকে আলাদা করা হয়েছে। এগুলো হলঃ
ধরন | ভবনের শ্রেণীবিভাগ |
A | আবাসিক |
B | শিক্ষা প্রতিষ্ঠান |
C | প্রাতিষ্ঠানিক (কেয়ার) |
D | হেলথ কেয়ার |
E | ব্যবসা |
F | বাণিজ্যিক |
G | শিল্প কারখানা |
H | সংরক্ষণাগার |
I | জনসমাবেশ |
J | বিপজ্জনক |
K | গ্যারেজ |
L | উইটিলিটিস |
M | অন্যান্য ভবন |
ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়? – Why Building Maintenance is Important?
অপরিকল্পিত ভাবে ভবন নির্মাণ, বিল্ডিং কোড অনুসরন না করা, অবহেলা, প্রশিক্ষন ও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রসমূহের সঠিক ব্যবহারবিধি না জানার কারনে প্রতি বছর ভবনধ্বস, ভবন থেকে আগুনে ও তা থেকে সৃষ্ট ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে বহু লোক মারা যাচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ভবনে অগ্নি দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রকট আকার ধারন করেছে। এর ফলে এক দিকে যেমন ঝড়ে যাচ্ছে তাজা প্রান অন্যদিকে বাড়ছে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমানও। তাই ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার, নির্মাণ ত্রুটি, নীচু জমি ভরাট করে ভবন নির্মাণ, প্রচলিত ইমারত নির্মান আইন ও নগর পরিকল্পনার কথা বিবেচনা না করে ভবন নির্মানের প্রবণতা ভবনধ্বস ও অগ্নি দুর্ঘনার জন্য দায়ি। সম্প্রতি রানা প্লাজায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কথা বাংলাদেশে সহ বিশ্ববাসি সকলেরই জানা।
এটি মূলত ভবনধ্বস, একে মানব সৃষ্ট দুর্যোগও বলা চলে। অগ্নি দুর্ঘটনার মধ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ার ও বাংলাদেশে তাজরীন ফ্যাশনের কথা মনে রাখবে সবাই।
এ সকল ঝুঁকি নিরসন ও ভবনকে অগ্নি নিরাপত্তার আওতায় আনার জন্য ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা সংশিষ্ট আইন সম্পর্কে জানতে হবে এবং তা ভবনের আকার ও প্রয়োজন অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।
ভবনের নিরাপত্তার সর্বত্তোম প্রক্রিয়াসমূহ – Building Safety Procedures
- বিল্ডিং নকশা তৈরি করার পূর্বেই অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা মাটির গুনাগুন বিশ্লেষন ও মাটির ধারণক্ষমতা পরিক্ষা করে নিতে হবে,
- নির্ধারিত ডিজাইনের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ফ্লোর বা উপরের তলার ছাঁদে টিনশেড নির্মাণ করা যাবে না,
- সঠিক অনুপাতে উন্নতমানের রড, সিমেন্ট বালি ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করতে হবে,
- অবশ্যই কলাম, বিম ও স্ল্যাব বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করতে হবে,
- দেয়াল কিংবা মেঝেতে কোন ফাটল বা হেলে পড়া দেখতে পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে,
- ভবনের নির্দিষ্ট কোন ফ্লোর অতিরিক্ত লোড করে ভারি মেশিন, মাল বা যন্ত্রপাতি রাখা যাবে না,
- নিচতলায় পার্কি রাখলে ঐ তলার পিলারগুলো বিশেষভাবে ডিজাইন করতে হবে,
- নতুন ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প ও অগ্নি প্রতিরোধক নিয়মাবলি প্রয়োগ করতে হবে,
- যে কোন ফ্লোর হতে সম্পূর্ণ ভবনে দ্রুত যোগাযোগ করা যাবে এমন ব্যবস্থা থাকতে হবে,
- পর্যাপ্ত এলার্ম ও ডিটেকশন সিস্টেম ইনস্টল করতে হবে,
- অগ্নি নির্বাপন সরঞ্জমাদি অবশ্যই থাকতে হবে,
- ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও ধোঁয়া থেকে রক্ষা পেতে উপযুক্ত উপকরন রাখতে হবে,
- জরুরী পাওয়ার সাপ্লাই থাকতে হবে,
- ফারায় লিফট থাকা প্রয়োজন,
- প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার ব্যারিয়ার ব্যবহার করতে হবে,
- ভবনথেকে নিরাপদে বের হবার জন্য পর্যাপ্ত বহিগর্মন পথ রাখতে হবে,
- নিরাপদে বের হবার পর সমাবেশ স্থান (এসেম্বলি পয়েন্ট) থাকতে হবে,
- সিঁড়ির প্রস্থ ও ঢাল নির্ধারনে আইন মানা জরুরী,
- অগ্নি প্রতিরোধক দরজা ও জানালা ব্যবহার করতে হবে,
- প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার ব্যারিয়ার ব্যবহার করতে হবে,
- সকল প্রকার চিহ্ন,প্রতিক,সংকেত ও নির্দেশনা ভবনের প্রতি ফ্লোরের এমন স্থানে রাখতে হবে যা সকলের দৃষ্টিগোচর হয়,
- ভবনের ভেতরে ধূমপান নিষিদ্ধ করতে হবে, প্রয়োজনে ভবনের বাইরে ধূমপানের জন্য আলাদা জোন নির্ধারন করে তা সাইনবোর্ডে উল্লেখ করে টানিয়ে দিতে হবে,
- নিশ্চিত হতে হবে ভবনের কাছা-কাছি স্থানে জলাধার অথবা নিজস্ব পানি সংরক্ষণাগার রয়েছে,
- সম্পূর্ণ ভবন ও তার আসে-পাশে কোথায় কি কি আছে তার নির্দেশনা চিত্রাআকারে উল্লেখ করে দেয়াল/বোর্ডে টানিয়ে দিতে হবে,
- প্রত্যেকটি ফ্লোরে ন্যূনতম ১টি গ্রিলবিহিন কজ্বাসংযুক্ত জানালা থাকতে হবে যাতে জরুরী প্রয়োজনে খুলে লেডার বা দড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসা যায়,
- অগ্নি নিরাপত্তা কমিটি ও প্রশিক্ষিন জনবল থাকতে হবে এবং
- চাহিদা অনুসারে আরো অনেক সরঞ্জাম ও পদ্ধতি ইনস্টল/অনুসরন করতে হবে।
ভবনের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারন অভিজ্ঞ ষ্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া, আইন না মেনে যত্রতত্র ভবন নির্মানের ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমান ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
যা বর্হিবিশ্বের কাছে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পাশাপাশি দেশিয় অর্থনিতিতে নেতি বাচক প্রভাব বিস্তার করছে।
তাই আমাদের সবাইকে নতুন ও বিধ্যমান ভবনের নিরাপত্তার বিষয়ে অবশ্যই আরো মনযোগী হতে হবে এবং অভিজ্ঞ স্ট্রাকচারাল ইন্জিনিয়ার দ্বারা ভবন নির্মান করতে হবে।