দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা [Disaster Management]
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলতে বুঝায় দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য গৃহিত কৌশল।
ব্যাপক অর্থে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হলো দুর্যোগের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এর ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য বিভিন্ন কৌশল এবং পরিকল্পনা। সঠিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব।
দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য যে সকল পদক্ষেপ বা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় তা নিন্মরূপঃ
● প্রতিরোধ (Prevention)
● হ্রাসকরন (Mitigation)
● প্রস্তুতি (Preparedness)
● সাড়া প্রদান (Response)
● পুনর্বাসন (Rehabilitation)
● পুনর্গঠন (Reconstruction)
● উন্নয়ন (Development)
প্রতিরোধ
সাধারণত প্রতিরোধ বলতে বুঝায় কোন ঘটনা বা পরিস্থিতিকে বাঁধা দিয়ে রাখা বা ঘটতে না দেয়া। দুর্যোগ প্রতিরোধ বলতে বুঝায় সম্ভাব্য কোন দুর্যোগকে বাঁধা প্রদান করে ঘটতে না দেয়া এবং উক্ত দুর্যোগের হাত থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বজ্রপাত থেকে বাঁচতে ভবনে বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন।
হ্রাসকরন বা প্রশমন
দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবং জীবন ও সম্পদ বাঁচতে নেয়া পদক্ষেপকে দুর্যোগ হ্রাসকরন বা প্রশমন বলে। দুই পদ্ধতিতে দুর্যোগ হ্রাসকরন বা প্রশমন করা যায়। ১. কাঠামোগত এবং ২. অ-কাঠামোগত।
কাঠামোগত ব্যবস্থাঃ এর মধ্যে রয়েছে তাল, নারকেল, গেওয়া, কেওড়া, বাবলা, ঝাউ সহ নানান জাতের গাছ লাগিয়ে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা। পাকা স্কুল, ঘড়-বাড়ি, অফিস এবং বন্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য নদী ড্রেজিং করা, সুইচ গেট বানানো ইত্যাদি।
অ-কাঠামোগত ব্যবস্থা
সঠিক সময়ে সতর্ক সংকেত ও বার্তা প্রদান করা, শুকনা খাবার ও পানি সংরক্ষন, নলকূপের মাথা খুলে মুখ পলিথিন দিয়ে বেঁধে দেয়া, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সকলকে উদ্বুদ্ধ করা, পত্রিকা, টিভি ও রেডিও এর মাধ্যমে সকলকে সচেতন করা ইত্যাদি।
প্রস্তুতি
অতীতের দুর্যোগের ঘটনার অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে অনুরূপ একটি ঘটনাকে অনুমান করে আগে থেকে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করার নামই দুর্যোগ প্রস্তুতি। যে কোন দুর্যোগে পতিত জনগোষ্ঠিকে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সমস্যা দূর করা ও জীবন রক্ষার প্রচেষ্টা সহ মৌলিক চাহিদা পূরণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় দুর্যোগের সময় নিরাপদে আশ্রয় পেতে পূর্ব থেকে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করে রাখা।
সাড়া প্রদান
দুর্যোগ চলাকালীন বা তার পরে দুর্যোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবন রক্ষা ও জীবন নির্বাহের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে গৃহীত ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিকে জরুরী সাড়া প্রদান বলে। দুর্যোগকে আমরা নানা ভাবে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেও অনেক সময় দুর্যোগ এড়ানো সম্ভব হয় না। তাই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সময় এ বিষয় বিবেচনা করে জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকা ও দুর্গত জনগোষ্ঠিকে জরুরী অবস্থায় সাহায্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠি, সংস্থা ও ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখা হচ্ছে দুর্যোগে সাড়াপ্রদান।
পুনর্বাসন
দুর্গত জনগোষ্ঠিকে অর্থনৈতিক, মানসিক ও ভৌত কল্যাণ সাধন এবং সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আক্রান্ত এলাকার স্বাভাবিক জীবন, জীবিকা ও কার্য পরিবেশ ফিরিয়ে আনাই হলো পুনর্বাসন। এ পর্যায়ে মৃত মানুষ, গবাদি পশু অপসারণের ব্যবস্থা করাহয় ও পুকুর, খাল-বিল, জলাশয় সমূহ পরিষ্কারের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, গবাদি পশু ইত্যাদির সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার সহ ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পূর্বাবস্থায় বা তার চেয়ে ভাল অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
পুনর্গঠন
সাধারণ ভাবে পুনর্গঠন বলতে বুঝায় কোন কিছু পুনরায় নির্মাণ করা। আর দুর্যোগের ক্ষেত্রে পুনর্গঠন বলতে বুঝায় দুর্যোগের পর নষ্ট হয়ে যাওয়া বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়া অবকাঠামো সমূহ পুনরায় নির্মাণ করা। এর মূল উদ্দ্যেশ হলো দুর্গত জনগোষ্ঠিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
উন্নয়ন
দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি হতে কাটিয়ে উঠা ও দুর্যোগের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াটা জরুরী। আর দুর্যোগের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে উন্নয়ন আবশ্যক। তাই কোন জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি ও এর ধারা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টাই হলো উন্নয়ন।