দুর্যোগ থেকে নিরাপত্তা

বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব এবং বন্যা মোকাবেলায় করণীয়

বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব – Harmful Effects of Floods

 
বিভিন্ন সময়ে বন্যায় বিপুল পরিমান ক্ষয়ক্ষতি সংঘটিত হয়েছে এবং এর ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রয়েছে। বিগতসালে ঘটা বন্যা ও তার ভয়াবহতা পর্যালোচনা করে ধারণা করা হচ্ছে প্রতি ২ বছরে মাঝারি আকারে এক বার, ৬ থেকে ৭ বছরে ভয়াবহ আকারে এক বার, ৭ বছরে এক বার ব্যাপক বন্যা ও ৩৩ থেকে ৫০ বছরে এক বার মহাপ্রলয়ংকরী বন্যা হানা দিতে পারে।
 
এ সকল বন্যায় প্লাবিত হয়ে ফসল নষ্ট হয়। মানুষের প্রাণহানি ঘটে ও সম্পদ নষ্ট হয়। পরিবেশ নষ্ট হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় ও উন্নয়নের ধারা ব্যহত হয়।
 
 

বন্যার ধরন – Types of Flood

প্রতি বছর একই কারনে বন্যা সংগটিত হয় না। বন্যার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো –
১. মৌসুমি বন্যা,
২. জোয়ার-ভাটা জনিত বন্যা এবং
৩. আকষ্মিক বন্যা।
 
 

বন্যা থেকে নিরাপত্তায় করনীয় – Safety from Flood

বাচ্চারা ও বয়ষ্ক ব্যক্তিরা বন্যায় সবচেয়ে বেশি আহত হয় এবং অসহায় হয়ে পড়ে। এছাড়াও কৃষকরা ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বহু মানুষ গৃহহীন ও কর্মহীন হয়ে পড়ে।
 
বন্যা হতে নিরাপত্তার ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে যে কাজগুলো করতে হবে তা নিচে দেয়া হলোঃ
● সর্বোচ্চ বন্যা লেভেলের উপরে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা।
● পূর্ব থেকে বা বন্যার পূর্বাবাস পাওয়া পাত্র পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুদ করে সংরক্ষণ করা।
● বর্ষা ও বন্যায় সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচতে বাড়ীতে কার্বলিক এসিড নিরাপদে সংরক্ষণ করা।
● বন্যার সময় চলাফেরার সময় নৌকা তৈরি করে রাখা। নৌকা তৈরি করার সামর্থ্য না থাকলে কলা গাছের ভেলা বেনিয়ে ব্যবহার করা।
● বাড়ি ও শোবার খাটের চারপাশে বেষ্টনী দেয়া। এতে করে ছোট বাচ্চারা নিরাপদ থাকবে ও ময়লা আবর্জনা প্রবেশ করতে পারবে না।
● খালি বা পরিত্যাক্ত বাড়িতে প্রবেশ না করা। কারণ এ সময় উক্ত স্থানে হিংশ্র প্রানি, সাপ ও বিষাক্ত পোকা-মাকর সেখানে বাসা বাঁধে।
● বন্যার পূর্বে বন্যা প্রতিরোধী শস্য রোপণ ও শস্য রোপণ মৌসুমের অভিযোজন করা।
● গবাদিপশু সমূহের জন্য মাচা দিয়ে উঁচু করে থাকার যায়গা তৈরি করে দিতে হবে।
● বন্যার সময় মসার উপদ্রব বেড়ে যায় তাই মসারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।
● নিরাপদ পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
● এ সময় নিয়মিত বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো পরীক্ষা করতে হবে ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে প্রভৃতি।
 
 

বন্যা মোকাবেলায় করণীয় – What to do to Deal with Floods

বেশিরভাগ সময় বন্যা হবার সম্ভবনা পূর্ব থেকে অনুমান করা যায়। তাই বন্যা হতে নিরাপত্তায় পূর্ব থেকেই কাঠামোগত ও অ-কাঠামোগত দুই ব্যবস্থাই নেয়া যায়। বন্যা হতে নিরাপত্তায় কি কি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে তা নিচে আলোচনা করা হলো।
 
 

সহজ ব্যবস্থাপনা – Easy Management

যে সকল ব্যবস্থাপনা অপেক্ষাকৃত সহজ ও অল্প সময়ে সম্পন্ন করা যায় সেগুলো হলো সহজ ব্যবস্থাপনা। এর মধ্যে রয়েছেঃ
● সর্বত্র বনায়ন সৃষ্টি করা,
● বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন,
● বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে প্রশিক্ষণের আয়োজন,
● পুকুর, খাল-বিল ও নালা খনন করে সেচের পানি সংরক্ষণ করা,
● রাস্তাঘাট নির্মাণের সময় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা,
● বিল্ডিং নির্মাণ কোড অনুসরণ করে বিল্ডিং নির্মাণ করা,
● বাড়ির চারপাশে বেষ্টনী নির্মাণ করা,
● এলাকায় বেষ্টনীমূলক বাঁধ তৈরি করা,
● নদীর দুই ধাঁরে বেড়ি বাঁধ দেয়া,
● নদীর দুই ধাঁরে ঘন জঙ্গল সৃষ্টি করা,
● বন্যা প্রবল অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা,
● বন্যা সহনক্ষম শস্য চিহ্নিত করে তা রোপণ করা ইত্যাদি।
 

 

ব্যয়বহুল ও শ্রমসাধ্য ব্যবস্থাপনা – Expensive and Laborious Management

যে সকল ব্যবস্থাপনায় প্রচুর অর্থ ও শ্রম দিতে হয় সেগুলো হলো ব্যয়বহুল ও শ্রমসাধ্য ব্যবস্থাপনা। বেশিরভাগ সমর ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনার কাজ সরকার সম্পন্ন করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছেঃ
● বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত থেকে আসা পানিকে বাঁধা প্রদান করা,
● নদী তীরকে সংরক্ষণের জন্য স্থায়ী সুদৃড় কাআঠামো নির্মাণ,
● ড্রেজারের মাধ্যমে নদী খনন করে নদীর গভীরতা বাড়ানো,
● সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থানে পানির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা,
● প্রর্যাপ্ত জলাধার নির্মাণের মাধ্যমে পানি প্রবাহকে নিয়ন্ত্রন করা ইত্যাদি।
 
বন্যা বাংলাদেশের একটি বড় দুর্যোগ। তাই এ দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার ব্যপক কর্মসূচি ও বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিছু সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু চলমান রয়েছে। এ দুর্যোগ মোকাবেলা ও নিয়ন্ত্রনের জন্য সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন থাকতে হবে।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button