দুর্যোগ থেকে নিরাপত্তা

ভূমিকম্প থেকে নিরাপত্তায় করণীয় – পূর্বে, চলাকালীন সময় ও পরবর্তী করনীয়

ভূমিকম্প হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর প্রাকৃতিক ভাবে ঘটা দুর্যোগ সহজে মোকাবেলা করা যায় না। ভূমিকম্প সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাস দেয়ার কোন যন্ত্র এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই কিছু নিয়মকানুন ও সতর্কতা মেনে চললে এর ভয়াবহতা কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব।
 
 
ভূমিকম্পের ক্ষতিক্ষতি কমিয়ে আনতে এর সতর্কতা মূলক করনীয় হিসেবে কাজকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১. ভূমিকম্পের পূর্বে করনীয়,
২. ভূমিকম্পের সময় করনীয় ও
৩. ভূমিকম্প পরবর্তী করনীয়।
 
 

ভূমিকম্পের পূর্বে করনীয় – Things to Do Before An Earthquake

 
এ অংশে ভূমিকম্পের পূর্বে কি করা উচিত সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারনা দেয়া হলঃ
● পরিবার বা কার্যপরিবেশে দুর্যোগ চলাকালীন সময়ে কার কি করনীয় তা পূর্ব থেকে নির্ধারন করা।
● বিল্ডিং কোড ও আইন মেনে ভবন নির্মাণ করা।
● নিয়মিত সকল ইউটিলিট সার্ভিস সমূহ পরীক্ষা করা।
● জরুরী টেলিফোন নাম্বার সমূহ (ফায়ার সার্ভিস, এম্বুলেন্স, ব্লাডব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনি) সংরক্ষণ করা ও দেয়ালে বা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শিত করা।
● একাধিক দরজা ও জরুরী বহিঃগমন সিঁড়ি রাখা। বহিঃগমন পথ চিহ্নিত করে দিতে হবে।
● প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সামগ্রী সংরক্ষণ করা।
● রাসায়নিক পদার্থ বা ক্ষতিকারক দ্রব্যাদি নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা।
● নিয়মিত অগ্নি মহড়া, অগ্নি নির্বাপক চালনা প্রশিক্ষন, উদ্ধার প্রক্রিয়া পরিচালনা করা।
 
 
 

ভূমিকম্পের সময় করনীয় – What to Do During An Earthquake

 
ভূমিকম্প যখন চলমান বা পুনরায় সংগঠিত হবার আশঙ্কা থাকে সেক্ষেত্রে কি করনীয় এ অংশে আমরা তা জানবোঃ
● আপনি ভবনের ভাহিরে থাকলে ভবনের ভেতর ঢোকা থেকে বিরত থাকুন ও বৈদ্যুতিক খুটি, ব্রীজ, ঝুলন্ত কোন বস্তু, সাইনবোর্ড বা কোন অবকাঠামোর কাছাকাছি আশ্রয় না নিয়ে খোলা জায়গায় অবস্থান করুন।
● কোন ভাবে বেরহতে না পারলে বা উপরের তলায় থাকলে দ্রুত খাট বা টেবিলের নিচে, ভীম বা কলামের পাশে বা রুমের এক কোণায় আশ্রয় নিন। বসে পড়ুন এবং কিছু দিয়ে (হেলমেট, বালিস বা নিজ হাত) মাথা কে সুরক্ষিত রাখুন।
● বহুতল ভবন, শপিং মল, সিনেমা হল বা সহজে নির্গ্মন যোগ্য নয় এমন স্থানে থাকলে আতংকিত হয়ে দৌড়ে বের হবার চেষ্টা করবেন না। মাথায় হাত রেখে বসে পড়ুন।
● এ সময় লিফট ব্যবহার করা যাবে না।
● পানিতে অবস্থান করলে দ্রুত উপরে উঠে আসতে হবে।
● বহুতল ভবনের ছাদ, জানালা বা উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়া যাবে না।
● ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনির পর আবার ঝাঁকুনি হতে পারে, তাই কিছু সময় নিরাপদে অবস্থান করা জরুরী।
● গাড়ির ভেতরে থাকলে বের হবেন না। বহুতল ভবন, ওভারব্রীজ, বড় গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুটি থেকে দূরে অবস্থান করতে হবে।
 
 
 

ভূমিকম্প পরবর্তী করনীয় – What to Do After An Earthquake

 
ভূমিকম্পের পর যে সকল কাজ করতে হবে তা নিন্মরূপঃ
● অগ্নি নির্বাপন, উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা সহ অন্যান্য সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা,
● সর্বশেষ অবস্থা জানতে টিভি বা রেডিও শোনা,
● খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা,
● ত্রান সামগ্রী সুষ্ঠ বন্টনে সাহায্য করা,
● হেলে পড়া বা ফাটল ধরা কোন ভবনের মধ্যে প্রবেশ না করা,
● প্রশিক্ষণ ও ক্ষমতা না থাকলে চাপা পড়া কোন ব্যক্তিকে টেনে হেচড়ে বের না করা,
● ধ্বংসস্তুপ ও আবর্জনা দ্রুত অপসারনের ব্যবস্থা নেয়া,
● রাসায়নিক বিক্রিয়া, বৈদ্যুতিক গোলযোগ বা অগ্নি কান্ডের সম্ভবনা থাকলে নিরাপদ দূরত্বে থাকা,
● দ্রুত পর্যাপ্ত পরিমান স্বেচ্ছাসেবক সংগঠিত করা,
● সরকার সহ বিভিন্ন সেবা মূলক সংস্থার কাজে সাহায্য করা,
● ক্ষতিগ্রস্ত গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎ লাইন ও ড্রেন লাইন মেরামত ও পুনঃ স্থাপন করা,
● প্রশিক্ষিত হলে আহত ব্যক্তিদের সেবা প্রদানে এগিয়ে আসা,
● মৃত ব্যক্তিদের যথাযথ ব্যবস্থা করা ও মৃত পশু-পাখি মাটিতে পুঁতে ফেলা,
● আহত, সর্বহারা ও নিহত পরিবারের স্বজনদের সান্ত্বনা প্রদান,
● ভেঙ্গে যাওয়া ব্রিজ ও রাস্তা সহ সকল জরুরী স্থাপরা পুনঃ স্থাপন করা,
● সম্পদের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী তাই কোন অবস্থায় যে কোন মূল্যবান দ্রব্য আনার জন্য পুনরায় ভবনে বা রুমে প্রবেশ করা যাবে না,
● কোন বিধ্বস্ত ভবনে আটকা পড়লে আপনার ডাক যদি কেউ শুনতে না পায় সেক্ষেত্রে শক্ত কিছু দিয়ে ফ্লোরে বা দেয়ালে জোরে জোরে আঘাত করুন, তাহলে নিকটে থাকা কেউ বা উদ্ধারকর্মী তা শুনতে পাবে।
● বড় বা ভারী কোন বস্তুর নীচে আটকা পড়লে টানা হেচড়া করে শরীরের শক্তি নষ্ট না করে কেউ পৌছানোর আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button