বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা

বিদ্যুৎ কি, প্রকারভেদ ও গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা – বিদ্যুৎ সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান

বিদ্যুৎ কি? – What is Electricity?

বিদ্যুৎ বা তড়িৎ হলো এমন এক ধরনের অদৃশ্য শক্তি যা গতি, আলো, শব্দ এবং রূপান্তরিত শক্তি ইত্যাদি উৎপাদন করে বিভিন্ন কাজ সমাধান করে।
 
 

বিদ্যুৎ কত প্রকার ও কি কি? – Types of Electricity

বিদ্যুৎ দু প্রকার। যথাঃ ১. স্থির বিদ্যুৎ এবং ২. চল বিদ্যুৎ।
 
 

বিদ্যুৎ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা ও তথ্য [বিদ্যুৎ সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান] – Important Definitions and Information About Electricity [General Knowledge About Electricity]

 

 কারেন্ট কি? [What is Current?]

পদার্থের মধ্যে বিদ্যমান মুক্ত ইলেকট্রনগুলোর কোন নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হওয়ার হারকে কারেন্ট বলে। কারেন্ট প্রতীক আই (I) ও একক কুলম্ব বা এম্পিয়ার (Ampere) এর প্রতীক (A) ।
 
কারেন্ট কে দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
১. অল্টারনেটিং কারেন্ট (Alternating Current – AC)
২. ডাইরেক্ট কারেন্ট (Direct Current – DC)
 
অল্টারনেটিং কারেন্টঃ যে কারেন্টের মান সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় তাকে অল্টারনেটিং কারেন্ট বলা হয়।
ডাইরেক্ট কারেন্টঃ সময়ের সাথে যে কারেন্টের মান পরিবর্তিত হয় না তাকে ডাইরেক্ট কারেন্ট বলে।
ডাইরেক্ট কারেন্টঃ সময়ের সাথে যে কারেন্টের মান পরিবর্তিত হয় না তাকে ডাইরেক্ট কারেন্ট বলে।
 

 

 এম্পিয়ার কি? – What is Ampere?

কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে এক কুলম্ব চার্জ এক সেনেন্ড সময় ধরে প্রবাহিত হলে উক্ত পরিমান চার্জকে এক এম্পিয়ার বলে।
 
এম্পিয়ার মাপার যন্ত্রের নাম এম্পিয়ার মিটার (Ampere Meter) । ১ কুলম্ব = ৬.২৪ X ১০১৮ ইলেকট্রন চার্জ।
 
 

 ভোল্টেজ কি? [What is Voltage?]

ভোল্টেজ হলো এক প্রকারের বৈদ্যুতিক বল বা চাপ। পরিবাহীর পরমানুগুলোর ইলেকট্রন (ঋণাত্নক কনিকা) সমূহকে স্থানচ্যুত করতে যে বল বা চাপের প্রয়োজন তাকে ভোল্টেজ বলে। ভোল্টেজ এর প্রতীক হলো ভি (V) এবং এর একক ভোল্ট (Volt) ।
 
ভোল্টেজ মাপার যন্ত্রের নাম ভোল্ট মিটার (Volt Meter) । ভোল্টেজ হলো রেজিস্ট্যান্স বা পরিবাহীর রোধ ও এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট এর গুনফল।
 
সুতরাং, ভোল্টেজ = কারেন্ট X রেজিস্ট্যান্স (V = I X R)
 
 

 ভোল্ট কি? – What is Volt?

কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে ১ এম্পিয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় যদি ১ ওয়াট পরিমান কাজ সম্পন্ন করে, তাহলে উক্ত পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যকে ১ ভোল্ট বলে।
 
ভোল্ট বা Volt এর প্রতীক (V) । ইতালীয়ান বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো ভোল্টের নামানুসারে এর নাম রাখা হয়েছে। তিনিই প্রথম বৈদ্যুতিক ব্যাটারি আবিষ্কার করেন।
 
 

 ওহম কি? – What is Ohm?

বিদ্যুৎ পরিবাহকের দুই প্রান্তের বিভক পার্থক্যের মান ১ ভোল্ট হলে তার মধ্য দিয়ে যদি ১ এম্পিয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহ হয় তাহলে সেই পরিবাহকের রোধকে ১ ওহম (Ω) বলে।
 
গাণিতিক ব্যাখাঃ Ω = V/A
যেখানে, Ω (ওহম); V = ভোল্ট; A = এম্পিয়ার
 
 
 

 ক্যাপাসিট্যান্স কি? – What is Capacitance?

ক্যাপাসিটরের কোন প্লেটগুলোর মধ্যে কোন বিভব পার্থক্য থাকলে প্লেটগুলো বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয় করে (চার্জ ধরে রাখে) এ ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যকে ক্যাপাসিট্যান্স বলে।
 
ক্যাপাসিট্যান্স এর প্রতীক সি (C) । এর একক ফারাদ Farad (F) বা মাইক্রো ফারাদ Micro Farad (µF) । ক্যাপাসিট্যান্স মাপার যন্ত্রের নাম ওহম মিটার বা ক্যাপাসিট্যান্স মিটার।
 
 

 ইন্ডাকট্যান্স কি? – What is Inductance?

ইন্ডাকট্যান্স কয়েলের একটি বিশেষ ধর্ম যা কয়েলে প্রবাহিত কারেন্টের হ্রাস বা বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে থাকে। এর প্রতীক L ও এর একক হ্যানরি (Henry) ।
 

 

 কম্পন কি? – What is Vibration?

কম্পকের ফলেই শব্দের সৃষ্টি হয়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোন বস্তু সাম্যাসস্থানের উভয় পার্শ্বে স্পন্দন ঘটে। অর্থাৎ একটি পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্নকালে তার অর্ধেক সময় সাম্যাসস্থানের একদিকে ও বাকি সময় বিপরীত দিকে গমন করে। যেমনঃ গিটারের তারে শব্দ সৃষ্টি ইত্যাদি।
 

 

 কম্পাংক বা ফ্রিকুয়েন্সী কি? – What is Frequency?

এক সেকেন্ড পিরিয়ডে যতগুলো সাইকেল সম্পন্ন হয় তাকে কম্পাংক বা ফ্রিকুয়েন্সী বলে। এর প্রতীক F । কম্পনের এস আই একক হার্জ (Hz) । এ নামকরণ করা হয়েছে বিজ্ঞানী হেনরিক হার্টজ এর নামানুসারে। যিনি সর্বপ্রথম তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।
 
 

 রেজিস্ট্যান্স বা রোধ কি? – What is Resistor?

পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় পরিবাহী পদার্থের যে ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যের কারনে তা বাধাপ্রাপ্ত হয় তাকে রেজিস্ট্যান্স বা রোধ বলে।
 
এর প্রতীক আর (R) এবংএকক ওহম (Ohm) ।
 
 

 কন্ডাকটর বা পরিবাহী কি? – What is Conductor?

যেসকল পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চলাচল করতে করতে পারে তাদের কন্ডাকটর বা পরিবাহী বলে। যেমনঃ সোনা, রূপা, লোহা ইত্যাদি।
 
 

 সেমি-কন্ডাকটর বা অর্ধপরিবাহী কি? – What is Semi-Conductor?

যেসকল পদার্থের মধ্য দিয়ে সামান্য পরিমানে বিদ্যুৎ চলাচল করে অর্থাৎ অবস্থা ভেদে কখনো বিদ্যুৎ চলাচল করে আবার কখনো চলাচল করে না তাদের সেমি-কন্ডাকটর বা অর্ধপরিবাহী বলে। যেমনঃ সিলিকন, জার্মেনিয়াম ইত্যাদি।
 
 

 ইন্সুলেটর বা অপরিবাহী কি? – What is Insulator?

যেসকল পদার্থের মধ্য দিয়ে সরাসরি বিদ্যুৎ চলাচল করতে করতে পারে তাদের ইন্সুলেটর বা অপরিবাহী বলে। যেমনঃ রাবার, প্লাষ্টিক ইত্যাদি।
 
 

 পাওয়ার বা বৈদ্যুতিক ক্ষমতা কি? – What is Power?

বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহারের হারকে পাওয়ার বা বৈদ্যুতিক ক্ষমতা বলে। পাওয়ার কে P দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। পাওয়ারের একক ওয়াট (Watt) বা কিলোওয়াট (Kilo Watt) ।
 
অর্থাৎ, পাওয়ার = ভোল্টেজ X কারেন্ট (P = V X I)
 
 

 এনার্জি বা বৈদ্যুতিক শক্তি কি? – What is Energy?

বৈদ্যুতিক ক্ষমতা বা পাওয়ার একটি সার্কিটে যত সময় কাজ করে পাওয়ারের সাথে উক্ত সময়ের গুনফলকে বৈদ্যুতিক শক্তি বা এনার্জি বলে। এনার্জি মাপার যন্ত্রের নাম এনার্জি মিটার।
 
এনার্জি এর একক Watt-hour বা Kilowatt-hour .
অর্থাৎ, এনার্জি, ওয়াট = পাওয়ার X টাইম (W = P X T)
 
 

 ওয়াট কি? – What is Watt?

কোন লোড একটি নির্দিষ্ট সময়ে যতটুকু শক্তি ব্যয় করে কোন কাজ সম্পন্ন করে তাকে ওয়াট বলে। ওয়াট পরিমাপক যন্ত্রের নাম ওয়াট মিটার।
 
ওয়াট বের করতে নিচের সূত্রটি ব্যবহার করা হয়। যথাঃ
 P = V X I X Cosθ
 P = I2 X R X Cosθ
 P = (V2 X Cosθ) / R
P = Power,
I = Current,
V = Voltage,
R = Resistance,
Cosθ = Power Factor,
 
 

 পিরিয়ড বা সময় কি? – What is Period?

এক সাইকেল সম্পন্ন করতে যে সময়ের প্রয়োজন হয় তাকে পিরিয়ড বা সময় বলে। এর প্রতীক হলো টাইম (T) ।
 
 

 সাইকেল কি? – What is Cycle?

একটি পরিবাহী একটি উওর মেরু ও একটি দক্ষিণ মেরুর মাঝখানে একটি পথ যদি একবার পরিক্রমন করে তাহলে একটি ভোল্টেজ তরঙ্গের সৃষ্টি করে। এ তরঙ্গকেই সাইকেল বলে।
 
 

 অল্টারনেশন কি? – What is Alternation?

অল্টারনেশন হলো ভোল্টেজ তরঙ্গের অর্ধাংশ।
 
 

 বৈদ্যুতিক সার্কিট বা বর্তনী কি? – What is Electrical Circuit?

বিদ্যুতের উৎস, পরিবাহী, নিয়ন্ত্রনযন্ত্র, রক্ষণযন্ত্র, ব্যবহারযন্ত্র একত্রে এমন একটি পথ যার ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে তাকে বৈদ্যুতিক সার্কিট বা বর্তনী বলে।
 
সার্কিটের সংযোগের ভিত্তিতে একে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
১. সিরিজ সার্কিট (Series Circuit) ,
২. প্যারালাল সার্কিট (Parallel Circuit) ও
৩. মিশ্র সার্কিট (Mixed Circuit)
 
সিরিজ সার্কিটঃ দুই বা তার অধিক রেজিস্টার একের পর এক যদি এমন ভাবে যুক্ত করা হয় যেখানে বিদ্যুৎ প্রবাহের একটি মাত্র পথ থাকে তাকে সিরিজ সার্কিট বলে।
 
প্যারালাল সার্কিটঃ একাধিক রেজিস্টার বা লোড প্রত্যেকটিকে বৈদ্যুতিক উৎসের আড়াআড়িতে এমনভাবে সংযুক্ত করা হয় যাতে বিদ্যুৎ প্রবাহের একাধিক পথ বিদ্যমান থাকে তাকে প্যারালাল সার্কিট বলে।
 

2 Comments

  1. স্থির বিদ্যুৎ ও চল বিদ্যুৎ
    এগুলো এসি নাকি ডিসি বিদ্যুৎ

    1. বিদ্যুৎ দুই প্রকার হয়। যথা: ১)স্থির বিদ্যুৎ ও ২)চল বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ প্রবাহ দুই রকম – এসি এবং ডিসি প্রবাহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button