অগ্নি নিরাপত্তা

আগুন কি | আগুনের প্রকারভেদ ও তার বিস্তার প্রক্রিয়া

আগুন কি? আগুন কিভাবে সৃষ্টি হয়? What is Fire? How Fire is Created?

 

আগুন হলো দাহ্যবস্তু, অক্সিজেন, পরিমিত তাপ এ তিনটি উপাদানের সংযোগে বিরামহীন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অবিচ্ছিন্ন প্রজ্জ্বলন প্রক্রিয়া।
প্রকৃতপক্ষে এ প্রজ্জ্বলন প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ করার জন্য চারটি উপাদানের প্রয়োজন। এ চারটি উপাদান হলোঃ
১. দাহ্য বস্তু,
২. অক্সিজেন,
৩. পরিমিত তাপ,
৪. বিরামহীন রাসায়নিক বিক্রিয়া ।
এ চারটি উপাদানের যে কোন একটি উপাদান অনুপস্থিত থাকলে আগুনের উৎপত্তি হবে না। এ চারটি উপাদান যখন একত্রে আসবে তখনই আগুনের উৎপত্তি হবে এবং যতক্ষন এ চারটির যোগসূত্র বিদ্যমান থাকবে ততক্ষন আগুন জ্বলবে।
আগুন কি? আগুন কিভাবে সৃষ্টি হয়? What is Fire? How Fire is Created?
 
চিত্রঃ আগুনের প্রজ্জ্বলন প্রক্রিয়া

আগুন কয় প্রকার ও কি কি? – Classification of Fire

 

আগুনের প্রকারভেদ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মতামত পাওয়া গেছে। সমস্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও এর প্রজ্জ্বলন প্রক্রিয়ার উপর নির্বর করে আগুনকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
১. কঠিন পদার্থের আগুন (Solid Fire)
২. তরল পদার্থের আগুন (Liquid Fire)
৩. গ্যাসের আগুন (Gases Fire)
৪. ধাতব পদার্থের আগুন (Metal Fire)
৫. বৈদ্যুতিক আগুন (Electrical Fire)
৬. রান্নার আগুন (Cooking Fire)

১. কঠিন পদার্থের আগুন

কঠিন দাহ্যবস্তু এ শ্রেণীর আওতাভুক্ত। যার আকার ও আয়তন আছে ও অংগারের সৃষ্টি করে। যেমনঃ তুলা, সুতা, কাপর ইত্যাদি।
 

২. তরল পদার্থের আগুন

তরল জাতীয় সকল পদার্থ এ বিভাগে রয়েছে। তেলে আগুন লাগার ঝুঁকি অনেক বেশি কারন তেল একটি দাহ্য পদার্থ। যেমনঃ কেরোসিন, থিনার, মবিল, ডিজেল, অকটেন, পেইন্ট ইত্যাদি।
 

৩. গ্যাসের আগুন

সাধারন তাপমাত্রায় ও চাপে কিছু কিছু পদার্থ বায়বীয় গ্যাসে রূপান্তরিত হয়। এসব গ্যাস থেকে যে আগুনের উৎপত্তি হয় তাকে গ্যাসের আগুন বলে। যেমনঃ মিথেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ক্লোরিন ইত্যাদি।
 

৪. ধাতব পদার্থের আগুন

যে সকল পদার্থ তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী, চকচকে, নমনীয় এবং পিটিয়ে পাত তৈরি করা যায় তাদের ধাতব পদার্থ বলে। আর এ সকল ধাতব পাদার্থে আগুনের উৎপত্তি হলেই তাকে বলা হবে ধাতব পদার্থের আগুন। যেমনঃ তামা, পারদ, সোনা, রূপা ইত্যাদি।
 

৫. বৈদ্যুতিক আগুন

স্বাভাবিক বিদ্যুৎ চলমান প্রক্রিয়া যখন বাধাগ্রস্ত হয়ে ভৃ-পৃষ্ঠে প্রত্যাবর্তন করে তখন তাকে শর্ট সার্কিট বলে। উক্ত শর্ট সার্কিট থেকে যে আগুনের উৎপত্তি হয় তাকে বৈদ্যুতিক আগুন বলে। বৈদ্যুতিক আগুন সংগঠিত হলে সাথে সাথে মেইন সুইচ বা লাইন দ্রুত বন্ধ করে দিতে হবে।
 

৬. রান্নার আগুন

এ শ্রেণীর আগুন অনেকটা তরল বা গ্যাস শ্রেণীর আওতাভুক্ত সাব শ্রেণী। সাধারণত রান্নাকাজে ব্যবহার করা উপকরন থেকে এ আগুনের উৎপত্তি হয়। যেমনঃ রান্নার তেল, মাছের তেল, পশুর চর্বি ইত্যাদি।
 

আগুন বিস্তারের প্রক্রিয়া [Process of Thermal Expansion]

 

তাপ অধিকরত তাপসম্পন্ন অবস্থান থেকে নিন্ম তাপের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। উক্ত প্রবাহের মাত্রার উপর ভিত্তি করে আগুন বিস্তার প্রক্রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
১. পরিবহণ (Conduction)
২. পরিচলণ (Convection)
৩. বিকিরণ (Radiation)

পরিবহণ

পর্দাথের অণুগুলো তাদের নিজস্ব স্থান পরির্বতন না করে স্পন্দনের মাধ্যমে এক অণু অন্য অণুকে তাপ প্রদান করে পর্দাথের উষ্ণতর স্থান থেকে শীতলতর স্থানে তাপ সঞ্চালিত করে সেই প্রক্রিয়াকে পরিবহণ বলে। কঠিন পর্দাথের মধ্যদিয়ে তাপের পরিবহণ ক্ষমতা বেশি, তার পর আছে তরলের অবস্থান, বায়বীয় পর্দাথে তার চেয়েও কম ও শূণ্যস্থানে কোন পরিবহণ সংগঠিত হয় না।
যেমন – একটি ধাতব দন্ডের এক প্রান্ত হাতে রেখে অন্য প্রান্ত আগুনে রাখলে কিছুক্ষণ পরেই হাতে গরম বোধ হবে। এর কারন হলো আগুনে থাকে অংশ তাপ গ্রহণ করে স্পন্দনের মাধ্যমে উত্তপ্ত অনুগুলো পার্শ্ববর্তী শীতল অণুগুলোকে তাপ প্রদান। সেগুলো আবার উত্তপ্ত হয়ে তাদের পার্শ্ববর্তী অণুগুলোতে তাপ সঞ্চালিত করে। মূলত সঞ্চালিত হবার এ প্রক্রিয়াই পরিবহণ।

পরিচলণ

যে পদ্ধতিতে তাপ কোন পর্দাথের অনুগুলোর চলাচলের মাধ্যমে উষ্ণতর স্থান থেকে শীতলতর স্থানে তাপ সঞ্চালিত হয় তাকে পরিচলণ বলে। তাপ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যম প্রয়োজন। তরল ও বায়বীয় পর্দাথগুলোতে এ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হয়ে থাকে।

বিকিরণ

যে প্রক্রিয়ায় তাপ জড় মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গের আকারে বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে সঞ্চালিত হইয়ে থাকে তাকে বিকিরণ বলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হতে কোন জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। তাপের বিকিরণ স্বচ্ছ ও তরল পর্দাথের মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে।
যেমন – কাঁচ, কোয়ার্টজ, কার্বন সালফাইড ইত্যাদি। পানির মধ্যে আশিংক বিকিরণ ঘটলেও অন্যান্য তরলের মধ্য দিয়ে বিকিরণ সম্ভব হয় না।
একটি ধাতব পাত্রে পানি ফুটাতে গেলে দেখা যাবে ঐ পাত্রটির হাতল গরম হয়ে পানির কনাগুলো টগবগ করতে থাকে। এখানে, হাতলটি গরম হওয়া তাপ পরিবহণ (Conduction) প্রক্রিয়া, পাত্রের পানির তাপমাত্রা বাড়ার কারন তাপ পরিচলণ (Convection) প্রক্রিয়া, এবং চুলার আগুনের উত্তাপ হলো তাপ পরিবহণের বিকিরণ (Radiation) প্রক্রিয়া।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button