অগ্নি নিরাপত্তা

অগ্নিকান্ডের কারন, প্রতিরোধ ও তাৎক্ষনিক করণীয়

অগ্নিকান্ডের কারণ [Reasons of Fire]

বিভিন্ন কারণে অগ্নিকান্ড সংগঠিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ড সংগঠিত হয় বৈদ্যুতিক কারণে। অগ্নিকান্ডের উৎস গবেষনা করে অগ্নিকান্ডের মূল কারণসমূহকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
১. কর্মক্ষেত্রে অগ্নিকান্ড সংগঠিত হবার কারণসমূহ, (Causes of fires in the workplace)
২. বাড়ীতে অগ্নিকান্ড সংগঠিত হবার কারণসমূহ, (Causes of house fires)
 
 
 

১. কর্মক্ষেত্রে অগ্নিকান্ড সংগঠিত হবার কারণসমূহ

কর্ম পরিবেশ,বহুতল ভবন অথবা অপেক্ষাকৃত বড় পড়িসরে যে সকল কারণে অগ্নিকান্ড সংগঠিত হয় তা হলোঃ-
• ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সিস্টেম,
• বয়লার বিস্ফোরণ,
• গ্যাস বিস্ফোরণ,
• জ্বলন্ত উপকরন,
• ওয়েল্ডিং,
• অবহেলা,
• খোলা অগ্নিশিখা,
• অতিরিক্ত তাপমাত্রা,
• মেশিনের যন্ত্রাংশের ঘর্ষণ,
• সিগারেটের জ্বলন্ত অবশিষ্টাংশ,
• সিলিন্ডারের অনিরাপদ ব্যবহার,
• ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যালের অনিরাপদ ব্যবহার,
• কর্মীদের অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ।
 
 

২. বাড়ীতে অগ্নিকান্ড সংগঠিত হবার কারণসমূহ

বাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সহ ছোট পড়িসর গুলোতে যে সকল কারণে অগ্নিকান্ড সংগঠিত হয়ঃ-
• ব্যাড হাইজকিপিং,
• মসার কয়েল,
• ধূমপান করা,
• ব্যবহারের পর গ্যাসের চুলা বন্ধ না করা,
• অপরিকল্পিত ও অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন,
• চুলা অথবা রান্নার গরম পাত্র দহনযোগ্য উপাদানের নিকটে থাকা,
• শত্রুতামূলক অগ্নি সংযোগ,
• শিশুদের আগুন নিয়ে খেলা,
• ময়লা ও ধুলাবালি জমে থাকা,
• অগ্নিসংযোগ,
• বজ্রপাত ও ভূমিকম্প,
• নির্বোধ ধূমপান,
• ব্যবহারের পর বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলি বন্ধ না করা,
• মোমবাতি,
• দেয়াশলাইয়ের কাঠি বা গ্যাস লাইটার,
• খোলা বাতির ব্যবহার,
• আবর্জনা ও অব্যবহ্রত জিনিসপত্র যত্রতত্র পড়ে থাকলে,
• জ্বলন্ত আবর্জনার ঢিবি থেকে,
• গ্যাস, এরেসোল ক্যান, পেইন্ট ইত্যাদি জ্বলন্ত তরল অতিরিক্ত তাপ ও সূর্যালোক থেকে দূরে না রাখা ইত্যাদি ।
 
 
 

কি ভাবে আগুন প্রতিরোধ করা যায়? (সহজ ও কার্যকরি কৌশলসমূহ) [Prevention from Fire Accidents]

বসতবাড়ী,বিদ্যালয়,বহুতল ভবন,অফিস-আদালত,ছোট-বড় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সর্বত্র আগুন প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আগুন লাগলে ঘাবড়ে না গিয়ে কি করতে হবে তা পূর্বে থেকে নির্ধারন করে রাখতে হবে। তাই ছোট-বড় সকলকে এ সম্পর্কে অবিহিত থাকতে হবে এবং মাঝে-মাঝে এর অনুশীলন করতে হবে।
“আগুন নির্বাপনের চেয়ে আগুন প্রতিরোধ উত্তম” । তাই প্রতিরোধকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
চলুন এবার জেনে নেই কি ভাবে আমরা আগুন কে প্রতিরোধ করতে পারবঃ
  •  প্রতিমাসে অন্তত একবার হলেও সকল বৈদ্যুতিক কানেকশন গুলো পরীক্ষা করতে হবে,
  • নিন্মমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে,
  • কজের স্থান ও চারপাশের পরিবেশ সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে,
  • হাতের নিকট প্রচুর পানি,বালি মজুদ রাখতে হবে,
  • ধুমপান নিষিদ্ধ করতে হবে বা আলাদা কোন জোন নির্ধারন করে দিতে হবে,
  • নিশ্চিত হতে হবে সকলে অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আগুননির্বাপক যন্ত্রসমূহ চালনে প্রশিক্ষিত,
  • আইন অনুযায়ী অগ্নি-নিরাপত্তা সরঞ্জামসমূহ সঠিক ভাবে স্থাপন ও নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে,
  • জ্বালানি ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের জন্য অভিজ্ঞ লোকদের রাখতে হবে,
  • জরুরী বর্হিগমনের পথ সবর্দা খোলা ও বাধামুক্ত রাখতে হবে,
  • বহুতল ভবন, কারখানা প্রেত্যেক রুম,ফ্লোর হতে নিরাপদে বের হতে একটি বর্হিগমন মানচিত্র এমন স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যাতে সবাই তা দেখতে পারে,
  • রুম বা কারখার ভেতর কোন লোক, প্রয়োজনীয় উপকরন রেখে দরজা বা গেট কোন ভাবেই তালা বদ্ধ করা যাবে না,
  • নতুন ভবনে অথবা বিধ্যমান যে কোন ভবনে নতুন করে ছাঁদে টিনশেড নির্মান করা যাবে না,
  • দিয়াশলাইয়ের কাঠি ধরানোর পূর্বে গ্যাসের চুলা অন করা যাবে না এবং চুলা জ্বালানোর ১৫ মিনিট পূর্বে রান্নাঘরের সকল দরজা,জানালা খুলে দিতে হবে, রান্নার পর চুলা নিভিয়ে ফেলতে হবে,
  • বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসমূহ ব্যবহার শেষে, বাহিরে যাবার পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে তা বিছিন্ন আছে,
  • দিয়াশলাই ও গ্যাস লাইটার সর্তকতার সাথে ব্যবহার করতে হবে ও নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে,
  • কোথাও অগ্নি ঝুঁকির তথ্য পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে,
  • পরিবারের সকলের সাথে বা কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করে পূর্বেই নির্ধারন করে দিতে হবে আগুন লাগলে কার কি করনীয়,
  • প্রতিমাসে অথবা ছয় মাস অন্তর অন্তর বাধ্যতামূলক ভাবে অগ্নি-মহড়া অনুশীলন করতে হবে, রাত্রি কালীনও অগ্নি-মহড়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে,
  • পরিবারের সকলকে ও একটি প্রতিষ্ঠানের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৮% কে অগ্নি-নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
 
 
 

অগ্নিকান্ড সংগঠিত হলে তাৎক্ষনিক ও পরবর্তিতে কি করবো? (যা অবশ্যই জানতে হবে) – What to Do Immediately and Next If The Fire is Organized?

যে কোন সময় অগ্নিকান্ড সংগঠিত হতে পারে তাই সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনি যদি অগ্নি-নিরাপত্তা কর্মী না হন সে ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে আপনার যাওয়া ঠিক হবে না। এ কাজটি অভিজ্ঞ লোকদের হাতে ছেড়ে দিয়ে তাদের সাহায্য করুন ও অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে থেকে চেষ্টা করুণ।
হঠাৎ আগুন লাগলে সাথে সাথে ও পরে কি কি করতে হবে আসুন এবার তা জেনে নেই।
  • কোথাও আগুন লাগলে সাথে সাথে বৈদ্যুতিক মূল সংযোগ বিছিন্ন করে দিতে হবে,
  • অগ্নিকান্ডের সময় যতটা সম্ভব ধীর-স্থীর ও শান্ত থাকতে হবে,
  • ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জরুরী টেলফোন নাম্বারটি সকলের মুখস্ত রাখতে হবে এবং দ্রুত তাদের জানাতে হবে,
  • ফারায় সার্ভিসের গাড়ি আসার পূর্ব পর্যন্ত নিরাপদ দূরত্বে থেকে অবশ্যই আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে,
  • অগ্নি নির্বাপর সামগ্রী ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে হবে,
  • বৈদ্যুতিক লাইনে, তৈল জাতীয় আগুনে, কোন মেশিন বা যন্ত্রে পানি দেয়া যাবে না,
  • সকলকে সতর্ক করার জন্য ফায়ার এলার্ম বাজাতে হবে বা বিশেষ কোন সিগন্যাল দিতে হবে,
  • কোনভাবেই তাড়াহুড়ো করা যাবে না। এতে করে পরে গিয়ে বড় রকম আঘাত পাওয়া, এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে কি করতে হবে তা ঠিক করা,
  • এলার্ম অথবা সিগন্যাল বাজানো শেষ হলে সকলকে সারিবদ্ধ ভাবে বের হয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসতে হবে,
  • ফ্লোর ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে গেলে হামাগুড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসতে হবে। সম্ভব হলে ভেজা কাপরের টুকরো,রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে মুখ ও নাক বেঁধে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসতে হবে। সাথে সাথে বের হওয়া সম্ভব না হলে গ্যাস মাস্ক পরে অপেক্ষা করতে হবে,
  • গায়ে বা কাপড়ে আগুন লাগলে কখনই দৌড়াবেন না। কারন বাতাসের অক্সিজেন আগুন জ্বলে উঠতে সাহায্য করে। তাই দ্রুত মাটিতে শুয়ে পড়ুন এবং দু হাত মুখমন্ডলের উপর রেখে গায়েয় আগুন নিবে না যাওয়া পর্যন্ত গড়াগড়ি দিতে থাকুন।

বীমা দাবি আদায়ের তাৎক্ষনিক করণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-নীতি সমূহ – Immediate and Important Rules and Regulations for Collecting Insurance Claims

হঠাৎ করেই আগ্নিকান্ড সংগঠিত হয় এবং দ্রুত তা ছড়িয়ে পরে বিধায় তার ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান অনেক আংশেই বেশি হয়। কোন কোন সময় এ ক্ষতি পূরণ করা সম্ভবও হয় না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিক বা মালিকগন যদি বীমা পলিসি গ্রহণ করে থাকেন তবে এ ক্ষতি-ক্ষতি কিছুটা কাটিয়া উঠা যায়।
অগ্নি দুর্ঘটনা বিষয়ে তাৎক্ষনিক মালিক বা মালিকগনকে কি করতে হবে এ অংশে তা আলোচনা করা হবে। যে সকল ব্যবস্থা নিতে হবেঃ
  • যতো দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী থানায় আগ্নিকান্ড বিষয়ে ডায়রি করতে হবে,
  • অগ্নি দুর্ঘটনার ক্ষতিগ্রস্ত মালামালের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে হবে,
  • স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া কে জানাতে হবে,
  • দ্রুত সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীকে জানাতে হবে,
  • প্রয়োজনে বায়ার ও অন্যান্য সহায়ক দ্রবাদি সরবরাহকারীদের অবহিত করতে হবে,
  • ক্ষতিগ্রস্থ মোট সম্পদের একটি আনুমানিক তালিকা করে তা সংরক্ষণ করতে হবে,
  • বীমা দাবী আদায়ে এ সংক্রান্ত সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে,
  • ফায়ার সার্ভিস থেকে ক্ষয়-ক্ষতির প্রতিবেদন সংবলিত একটি সনদপত্র নিতে হবে,
  • ক্ষতিগ্রস্থ কাওরখানার বা স্থানের সর্বশেষ অবস্থা অবহিত করার জন্য নির্ধারিত বিভাগকে পরিদর্শনের অনুরোধ করতে হবে,
  • ভ্যাট অব্যাহতি পেতে চাইলে ভ্যাট অফিসে সংশ্লিষ্ট সকল সার্টিফিকেট,দলিল পত্র জমা দিতে হবে।
 
 
 
নোটঃ নিজে জানুন এবং শেয়ার করে অন্যকে জানতে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button